
চট্টগ্রাম (সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি)
আজ থেকে তিনদিনব্যাপী (১৭ ফেব্রু-১৮ ফেব্রু-১৯ ফেব্রু) ২০২৩ইং শিব চর্তুূদশী মেলা ও ৫ মার্চ থেকে ৭ই মার্চ ২০২৩ইং পর্যন্ত দোল পূর্ণিমা মেলা (১৫ দিন ব্যাপি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব এ শিব চতুদ্দর্শী মেলা। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় এবারে প্রায় ২০ লক্ষ তীর্থযাত্রীর সমাগম হবে বলে ধারণা করছেন মেলা কমিটি। ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির পক্ষ থেকে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছে।
মেলা এবং তীর্থযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দানের জন্য সীতাকুণ্ডের প্রশাসন, মেলা কমিটি এবং স্রাইন কমিটির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার বাহিনীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মেলা কমিটি ও স্রাইন কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ও সদস্যরা তৎপর থাকবে। এছাড়াও বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ, সীতাকুণ্ড জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাগীশিক সীতাকুণ্ড উপজেলা সংসদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, সীতাকুণ্ডস্থ বিভিন্ন মঠ-মন্দির সহ বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের পক্ষ থেকে সেবামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মেলার স্থান পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় আর সেজন্য যাত্রী সাধারণকে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ করছেন মেলা কমিটি।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা ও অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক দুলাল দে কথোপকোথনে
শিব চতুদ্দর্শী
মেলায় আগত লক্ষ লক্ষ যাত্রীদেরকে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে চিহ্নিত সমস্যা ও সমাধানের সুষ্পষ্ঠ কিছু ধারনা দিয়েছেন যা নিম্নরূপ:-
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামের মূল মেলাটি সীতাকুণ্ড মন্দির সড়কে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে উক্ত এলাকার কিছু জনগণ উক্ত রাস্তাটির নাম “কলেজ রোড” বানিয়ে ফেলেছে। তাই মন্দির সড়ক এবং কলেজ রোড নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। দুইটি একই রাস্তা।
আগুন লেগেছে, পাহাড় ভেঁঙ্গে গেছে, চাপাচাপিতে মানুষ মারা গেছে ইত্যাদি গুজবে কান দেয়া যাবে না। একশ্রেণির স্বার্থান্বেষীমহল এসব গুজব সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। এধরনের বিপর্যয় হলে, মেলা কমিটির তরফেই মাইকে ঘোষণা করা হবে।
পাতাল কালি, মন্দাকিনী দর্শন করানোর নামে এক শ্রেণীর ডাকাতরা সাধু বেশে উঁৎ পেতে থাকে। তাই দলবিচ্ছিন্ন হয়ে এসব স্থান দর্শনে কেহ যাবে না।
মেলার নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচল করতে হবে। ইতিমধ্যে তীর্থের রাস্তা তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে সম্প্রসারণ এবং সংস্কার করা হয়েছে তাই ঘুরপথে নয় মেলা কমিটির নির্দেশিত রাস্তায় চলাচল করতে হবে।
জুয়া, সাট্টা, তিন তাস, কেরকেরি ইত্যাদি খেলা মেলায় নিষিদ্ধ। অতএব সেখানে দাঁড়ানো যাবে না এতে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে।
ব্যাসকুন্ডের পাড়ে মহিলাদের স্নানের জন্য স্নানাগার নির্মিত হয়েছে। মহিলাদেরকে নিরাপদে সেগুলো ব্যাবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উৎসুক জনতা, স্বেচ্ছাসেবকসহ সকলে ব্যাসকুন্ডের পাড়ে মেলা/স্নান চলাকালীন নিজে ছবি তুলবে না এবং অন্যকেও তুলতে দিবে না। সেখানে মেলা কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ একটি বাহিনি সক্রিয় থাকবে এই অশ্লীলতা ও রোমিওপনা মোকাবেলায়।
দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আগত সকল সংগঠন বা সংঘবদ্ধ তীর্থযাত্রীরা দলবদ্ধভাবে কোনো নির্দিষ্ট ড্রেসকোড ব্যাবহার করে অযথা তারস্বরে বাঁশি বাজিয়ে হৈ-হুল্লোড়ের সাথে তীর্থদর্শনের চেষ্টা করবে না। এতে সাধারণ তীর্থযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দর্শনের কাজ শেষ করতে হবে। তাড়াহুড়ো হৈ-হুল্লোড়ে যদি বিশৃঙ্খলা দেখা যায় তা মেলাকমিটির সদস্যদের দৃষ্টিগোচর হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মেলা অঙ্গন সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। অতএব সন্দেহজনক গতিবিধি নজরে এলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মেলা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিটি আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশনে স্টপেজ করার ঘোষণা করা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আগত তীর্থযাত্রীরা তাই ট্রেনে নিরাপদ ভ্রমণ করতে পারবেন। যারা রিজার্ভ বাস বা অন্যান্য গাড়ি নিয়ে আসবে তারা সীতাকুণ্ড পৌরসভার পাশ্ববর্তী “সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়” এর মাঠে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গাড়ি পার্কিং করবে। কোনো অবস্থাতেই রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থানে ও যত্রতত্র পার্কিং করবে না। এই নিয়ে যেকোনো আইনী ঝামেলার জন্য মেলা কমিটি দায়ী থাকবে না। এছাড়াও বয়ো:বৃদ্ধ ব্যক্তি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য “বটতলী রেলওয়ে কালী মন্দির” হতে বিশেষ যানের মাধ্যমে ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা কমিটির নির্ধারিত নির্দিষ্ট ফি পরিশোধের মাধ্যমে উক্ত ব্যাক্তিরা চন্দ্রনাথ দর্শন করতে পারবেন।
মেলা এলাকায় মেলা কমিটি ও বিদ্যুৎ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাত্রিকালীন পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই যত্রতত্র মলমূত্রাদি ত্যাগ করে তীর্থ এলাকার পরিবেশ দূষিত করা যাবে না।
মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এর তরফে মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। যেকোন প্রকার অসুস্থতার জন্য উক্ত ক্যাম্প গুলোতে সেবা নেয়া যাবে।
যেকোনো প্রকার অসুবিধার জন্য গজারিয়ার পুকুর পাড়ে মেলা কমিটির অস্থায়ী অফিস অথবা প্রেমতলাস্থ স্থায়ী অফিসে যোগাযোগ করবে যাত্রীগণ।
সর্বোপরি
প্রথমে নিজেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এটিই প্রথম সচেতনতা। তাড়াহুড়ো করে কেহ শিব দর্শনে যাবে না। মনে রাখতে হবে তিথি মিস করলে ভবিষ্যতে আরো তিথি পাওয়া যাবে কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। তাছাড়া কলিযুগে দেবাদিদেব মহাদেব চন্দ্রশেখরে সদা বিরাজিত। তাই তিথি না পেলেও আক্ষেপের কিছুই নেই।
সীতাকুণ্ডে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীদের শিবদর্শন নিরাপদ হউক।