কেউ কথা রাখেনি। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কেউ কথা রাখেনি। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে প্রত্যেকে নিজের মত সরে গিয়েছেন। ফলে মামলার ঘানি টানতে টানতে এখন নিঃস্ব তিনি। কক্সবাজারের মেধাবী, উদীয়মান তরুণ সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রতিভাবান এই সাংবাদিক।
সাংবাদিক ফরিদের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, নিয়মিত সংবাদের প্রেক্ষিতে তৎকালীন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে ‘জেলায় আইনশৃংখলার উন্নতি, অপরাধে নিমজ্জিত টেকনাফের ওসি’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশ করেন ফরিদুল মোস্তফা খান। জনগণের জানমাল রক্ষায় করা এই নিউজই কাল হয়ে যায় ফরিদুল মোস্তফার জীবনে। ওসি প্রদীপ নানা ভাবে তাকে আটকাতে জাল বুনতে শুরু করে।
তার বিরুদ্ধে ওসি প্রদীপের নানা ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে তিনি স্ব-পরিবারে ঢাকায় চলে যান। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে প্রাণের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনও করেন। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রদীপের নির্দেশে একদল লোক ঢাকায় তার ভাড়া বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে টেকনাফ নিয়ে আসা হয়। সেখানে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। দুদিন পর কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়াস্থ তার বাসা থেকে আটকের নাটক সাজায় সাবেক ওসি প্রদীপ।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে ওসি প্রদীপের নির্দেশে অস্ত্র মামলা ৭৫/১০২৫, মাদক মামলা ৭৭/১০২৭, চাঁদাবাজি মামলা ৪২/৭৯৮, ইয়াবা মামলা ৭৬/১০২৬, চাঁদাবাজি মামলা ১৫/৫৭৭, চাঁদাবাজি মামলা ১১৫/৫৬২ দায়ের করা হয়।
সাংবাদিক ফরিদের স্ত্রী হাসিনা জানান, প্রদীপের নির্যাতনে মাথা, চোখ ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জখমপ্রাপ্ত হয় সাংবাদিক ফরিদ। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।
২০২০ সালের ২৭ আগস্ট জামিনের দীর্ঘ দেড় মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয় ফরিদুল মোস্তফাকে। এরপর পরিপূর্ণ সুস্থ না হলেও বাড়ি ফিরে যায় ফরিদুল মোস্তফা খান। কারণ অর্থের অভাবে চিকিৎসা চালানো সম্ভব হচ্ছিলনা।
তার পারিবারিক সুত্র আরো জানায়, গ্রেফতারের পর থেকে মিথ্যা মামলায় জামিন নিতে সর্বস্ব হারাতে হয় তাকে। ছোট্ট একখানা মাথা গুজার ঠাইটা বিক্রি করতে হয় তার পরিবারকে। জামিনের পর চিকিৎসা শেষে উঠেন ভাড়া বাড়িতে।
এরপর থেকে একদিকে শারীরিক অসুস্থতা। অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে দিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কক্সবাজারের তৎকালিন পুলিশ সুপার মাসুদসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা মামলা প্রত্যাহারের আশ^াস দিলেও তা হয়নি।
মামলার গøানি টানতে গিয়ে এখন মানসিক, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তরুণ সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। না পারছেন মামলা চালাতে, না পারছেন সংসার গুছাতে। অন্যদিকে তার পরিচালনাধীন দৈনিক কক্সবাজারবাণী পত্রিকাটিও চালু রাখতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তার স্ত্রী হাসিনা মোস্তফা বলেন, তিনি এমনভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন যে-তার পরিবার বাধ্য হয়ে তাকে সুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা না গেলে তার পরিবারের অপুরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
ফরিদের পরিবার, স্বজন, সহপাঠীরা সাংবাদিকরা বিষয়টিতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত