
চারু ও কারু লোকশিল্প বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোককলা; ধর্মীয় ও সামাজিক প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে এর উদ্ভব। আলপনা, মনসাঘট, লক্ষ্মীর সরা, মঙ্গলঘট ইত্যাদি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন লোকশিল্প। পটচিত্রে ধর্মীয় আবেগ যুক্ত থাকলেও তা জীবিকার উপায় হিসেবে গণ্য। নানারকম ডিজাইন ও অলঙ্করণে শোভিত আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি গৃহস্থের ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটায়। খেলার পুতুল, সখের হাঁড়ি, সোনা-রূপার অলঙ্কার ইত্যাদি সৌখিন দ্রব্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। তবে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক-সব শিল্পকলায়ই কিছু না কিছু নান্দনিক আবেদন থাকে। তাই হিংস্র পশু বা রাক্ষসের মুখোশচিত্র যতই কদাকার হোক, নির্মাতার হাতের ছোঁয়া এবং ঐতিহ্য-সংস্কার-প্রথাগত আবেগের সংমিশ্রণে তার মধ্যেও এক প্রকার রস সঞ্চারিত হয়, যা বীভৎস রস নামে খ্যাত।
লোকশিল্পের উপকরণ অতি সাধারণ। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত মাটি, কাঠ, কাপড়, সুতা, শোলা, শঙ্খ, নল, বাঁশ, বেত, শিং ইত্যাদি দিয়ে নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়। সোনা, রূপা, পিতল, হাতির দাঁত প্রভৃতি মূল্যবান উপকরণও ব্যবহার করা হয়। লোকশিল্পের যন্ত্রপাতিও অতি সাধারণ। এসব সাধারণ উপাদান ও যন্ত্রপাতি দ্বারা বাংলার লোকশিল্পীরা যুগযুগ ধরে অসামান্য শিল্প তৈরি করে আসছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পেশাদার-অপেশাদার শিল্পীদের বেশির ভাগই গ্রামে-গঞ্জে বসবাস করে। কাপ্তাই উপজেলা র চ্ন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতাল আবাসিক এলাকা র চারু শিল্পী মংশিলা মারমা ( ষ্টিফেন) ।
মাঝে মাঝে তিনি এনামেল ,এক্রিলিক কালারের কম্বিনেশনে ক্যানভাসে অথবা মডিফাইড করা ভূঁতুম বাঁশে নিরলস ভাবে আপন মনে এঁকে কিংবা পুড়িয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের ওয়াল হেংগিং পেইন্টিংস অথবা বাঁশের ওয়াল শো পিচ তৈরি করে সময় মতো দেশে বিদেশের ক্লায়েন্ট দের ডেলিভারি দিয়ে থাকেন । শিল্পী বলেন, তাঁর কাজের থিম হলো, প্রকৃতি, গ্রাম বাংলা, শৈশব, ফুল , পাখি ইত্যাদি। কখনো আবার বিভিন্ন ধরনের গাছের শুকনো পাতাকে মডিফাইড করে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেন আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের দূর্লভ চিত্র । প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে উক্ত কাজের উপরে কোন সার্টিফিকেট না থাকলেও শৈশব কৈশোর হতেই শিল্পী ব্যক্তিগতভাবে চর্চা করতে করতেই আজ এতদূর এগিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি এ ও বলেন , বর্তমানে তাঁর সৃষ্টিশীল কাজ গুলো বাহিরের দেশের ক্রেতাদেরকেও আকৃষ্ট করেছে। এ পর্যন্ত তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, জার্মানি ফ্রান্স সহ আরো কয়েকটি বাইরের দেশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে বিক্রয় করেছেন। গুনী এই শিল্পীর পরিচয়, নাম : মংশিলা মারমা ( ষ্টিফেন) । ষ্টিফেন নামেই শিল্পীকে সবাই চেনেন। শিল্পীর বাবার বাড়ি বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার বাইশফারী গ্রামে ও মা’য়ের বাড়ি কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী মৌজার উয়োপো মইদং ( ক্যাজাইঞো কার্বারী পাড়ায় । বর্তমানে শিল্পী পরিবার নিয়ে কাপ্তাই উপজেলাধীন খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল চন্দ্রঘোনার, আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন। এলাকাতেই বসবাস করেন । শিক্ষা জীবনে তিন প্রথমে স্থানীয় মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ে, পরে চন্দ্রঘোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৯৩ সনে এস এস সি ও রাঙ্গুনিয়া কলেজ হতে ২০০০ সনে বি এ পাশ করেন। শিল্পী বলেন, বর্তমানে দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে আমুল পরিবর্তন হয়েছে সে দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের কারু শিল্পকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেকার যুবক যুবতীদেকে ট্রেনিং প্রদানের মাধম্যে বেকারত্ব দূর করতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন।শিল্পী মংশিলা মারমা স্টিফেন, মোবাইল নং ০১৬৯০১৬৬০২৪, ০১৭৭৪১১৯০২০ এই নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন যে কোন শিল্প কার্যের জন্য।
প্রতিবেদক সাংবাদিক চৌধুরী মুহাম্মদ রিপন।