তিন পার্বত্যঞ্চলে বড়ুয়াদের প্রতি বৈষম্যের অবসানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

আহমদ বিলাল খানঃ

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিন পার্বত্যঞ্চলের জেলা পরিষদে মুসলমান-হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বিগত ২৭ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি, সকল ধরনের বৈষম্য বন্ধ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বডূয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করার দাবিতে বড়ুয়াদের প্রতি বৈষম্যের অবসান চায় বডূয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বডূয়া সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বডূয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বলেন, পার্বত্য চুক্তির পর গঠন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ইত্যাদি গঠন করা হয় সংখ্যায় কম-বেশী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও এসব কমিটিতে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয়নি বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি। পার্বত্য চুক্তির পর আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণের সাথে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বৈঠক করা হয় অন্য সকল জনগোষ্ঠীর ন্যায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কমপক্ষে ১জন করে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য, তারা কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ এবং সিনিয়র রাজনৈতিক নেতারা, তারা তাদের দেয়া কথা রক্ষা করেনি। বিগত স্বৈরাচারের শাসনকালিন ১৭ বছর ধরে পাহাড়ে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কিছু পদলেহনকারী স্বঘোষিত নেতার কারণে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত ছিলো না। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ১৭ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালিন তার দলীয় লোকজন বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র : বাড়ি-ঘর ভাংচুর,ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, রাঙামাটি – ঢাকা রোডে সেন্টমার্টিন পরিবহনের ব্যবসা কেড়ে নেয়া, রাঙামাটিতে সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ৫৭ (২) ধারায় একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়। রাঙামাটির ভেদ ভেদী বাজারে মৃত রুহিনী বড়ুয়ার জায়গাতে জোর পূর্বক দখল করে রাসেল স্মৃতি সংসদ নামে আওয়ামীলীগের অফিস ঘর নির্মাণ করে এবং রাঙামাটি পৌরসভার নাম দিয়ে মৃত রুহিনী বড়ুয়ার জায়গাতে ভেদ ভেদী পৌর কাঁচা বাজার নির্মাণ করে আওয়ামীলীগ। ৫ জুন-২০১৭ রাঙামাটি জেলখানার সামনে থেকে চট্ট-মেট্রো ১৩৪৪৬৫ নম্বরের একটি হাইয়েস গাড়িতে র্যাব-৭ এর তৎকালিন মেজর ফাহিম এর নেত্বত্বে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যকে অপহরণ করে সিলেটের চুনারুঘাট থানার সাতছড়ি জঙ্গলে চোখবাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। ২০১৭ সালে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর মহাপরিচালক ছিলো ড.বেনজির আহম্মদ। গত ২৪ ফেব্রয়ারি-২০২৪ ইংরেজি তারিখ রাতে রাঙামাটি পৌরসভার ০৯ নং ওয়ার্ডের উলুছড়ি (আলুটিলা) এলাকায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যর বাগান বাড়িতে আওয়ামীলীগের মদদে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ৫ আগস্ট-২০২৪ তারিখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর পার্বত্যবাসী আশায় বুক বাধে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের শিকার বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ও বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পিছিয়ে থাকা প্রত্যকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ও তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নিয়োগ, শিক্ষা উপবৃত্তি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বৈষম্যনীতির অবসান হবে। কিন্তু বর্তমান বৈষম্য বিরোধী চেতনাকে ধারণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নতুনভাবে গঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে পূর্বের ন্যায় বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। যা বর্তমান সরকারের বৈষম্য বিরোধী চেতনা বিরোধী এবং জাতীর কাছে কোনভাবে কাম্য নয়।
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চাকুরী ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বাঙালিদের জন্য ৩০ শতাংশ ও নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জন্য ৭০ শতাংশ বরাদ্দ নীতি অবলম্বন করছে। এছাড়াও নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য রাখা কোটার ৭০ শতাংশই চাকমা সম্প্রদায়ের। ফলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাসরত বাঙালি-বড়ুয়া-মারমা জনগোষ্ঠী সহ আরো বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বিদ্যমান বৈষম্যনীতি দূর করে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল প্রকার নিয়োগ ও শিক্ষা বৃত্তি বন্টনের প্রস্তাব করছি। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিটি বৈষম্যেভরা। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাকমা থেকে, চলমান পাতা-০৪ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ত্রিপুরা থেকে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মারমা থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত করার আইনটি বৈষম্যমূলক একটি আইন। এধরনের বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করে তিন বছর পর-পর পর্যায়ক্রমে মুসলমান, বড়ুয়া, হিন্দু,তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং,ম্রো, চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্য থেকে প্রতিনিধিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করার আইন প্রণয়ন করা অতিব জরুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর দাবি :(১) পার্বত্য চুক্তিটি সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। (২) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর বোর্ড সভায়, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসনে আইন শৃংখলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলা প্রশাসনে আইন শৃংখলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভার শহর উন্নয়ন কমিটিতে বিশেষ বিবেচনায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
(৩) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর শুমারির তথ্যে অধ্যায় ৩ রাঙামাটি জেলার শুমারির ফলাফল ৩.১.৪ এর ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা ছকে বা খানায় বৌদ্ধ বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিচিতি আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ শুমারি সম্পর্কিত অধিকতর তথ্য-উপাত্ত আলাদাভাবে ছকে বা খানায় বৌদ্ধ
“বড়ুয়া” জনগোষ্ঠীর পরিচিতি সংযুক্ত করা। (৪) রাষ্ট্রীয় ভাবে বৌদ্ধ “বড়ুয়া” জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বৈষম্যের শিকার বিধায় তিন পার্বত্য জেলা বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে সংসদ সদস্য পদ সংরক্ষিত করে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেয়া। (৫) বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসাবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। (৬) ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত অন্য সকল জনগোষ্ঠীর ন্যায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সদস্যদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া। (৭) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দিবস এবং শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সাথে সাক্ষাৎকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে উল্লেখিত দিবসে আমন্ত্রণ জানানো। চলমান পাতা-০৫ (৮) বৈষম্য বিলোপ কমিশন চাই। আমাদের দাবি সমূহ মানা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবিধানের অধীনে গণতান্ত্রিক পন্থায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বাদল বরণ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলনসহ প্রধান উপদেষ্টা ভদন্ত অদিতানন্দ মহাথোরো, কেন্দ্রীয় সংগঠক শিক্ষক প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সংগঠক জিনপদ বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সংগঠক অপু বড়ুয়া, জেলা সংগঠক নিপ্পন বড়ুয়া, জেলা সংগঠক জুয়েল বড়ুয়া, জেলা সংগঠক পলাশ বড়ুয়া জেলা সংগঠক রুবেল বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত