অবশেষে নাটকের পর্দা নামল, কাস্টমস সুপার শামীমাকে আটক করেছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বেনাপোল প্রতিনিধিঃ

অবশেষে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ঘুষ কেলেঙ্কারির নাটকীয় পরিণতি ঘটেছে। রক্ষা করা গেল না মহানায়িকা কাস্টমস সুপার শামীমা আক্তারকে। ৬ অক্টোবর দিনভর নানা নাটকীয়তার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এনজিও কর্মী হাসিবকে থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে সাংবাদিকদের তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে একদিন পর শামীমার বিরুদ্ধে মামলা দিতে বাধ্য হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যশোর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে যশোর জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত নং ৯, স্মারক নং ২৪২২ এবং মামলা নং ১১/২০২৫, তারিখ ৭/১০/২০২৫। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—
১. বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সুপার শামীমা খাতুন, পিতা শহিদুল ইসলাম, গ্রাম: ৩০২, নাজির শংকরপুর, যশোর। ২.বেনাপোল পোর্ট থানার নাজমুল হোসেনের ছেলে হাসিবুর রহমান (২৭)। ১ ও ২ নং আসামি ঘুষ লেনদেনের কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকায় তারা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪ ও ১৬৫(ক)/১০৯ ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন গোপন সূত্রে ঘুষ লেনদেনের খবর পেয়ে কাস্টমস হাউসের সামনে অবস্থান নেন। পরে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বেনাপোল গ্রামের এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমানকে কাস্টমস হাউসের সামনে থেকে আটক করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, কাস্টমস সুপার শামীমা দীর্ঘদিন ধরে এনজিও কর্মী হাসিবকে দিয়ে ঘুষ লেনদেনের কাজ করতেন। তিনি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ৬ নং গ্রুপে দায়িত্বে ছিলেন, যেখানে ভারত থেকে মোটর পার্টস ও মোটরযান যন্ত্রাংশ আমদানি হয়। সেখানে এসএস কোড বদলের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করা হতো। হাসিব বিভিন্ন সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে কখনো নগদ, কখনো বিকাশের মাধ্যমে শামীমার কাছে পৌঁছে দিতেন। মোবাইল মেসেজে দেখা গেছে, গত ১০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে হাসিব ০১৭১১-৩৭৫৩৭৯ নাম্বারে ৭ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। ২২ আগস্ট ০১৭৩৫-৩৯৮০৮০ নাম্বারে বিকাশ করতে বলা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ০১৯১৪-৮৪৮১২ নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় টাকা ওই নাম্বারে যাবে কি না। পরে হাসিব জানান, “ম্যাডাম টাকা পাঠানো হয়েছে, লাস্ট নাম্বার ১৪১৪। এছাড়া হাসিব বিভিন্ন জায়গা থেকে শুল্ক ফাঁকি সম্পর্কিত কাজে সহায়তা করে টাকা সংগ্রহ করতেন। পরে কাস্টমস হাউসের সামনে বিকাশ দোকানে টাকা রেখে, সুযোগ বুঝে শামীমাকে সরবরাহ করতেন। ঘটনার দিন হাসিব এক সিএন্ডএফ প্রতিনিধির কাছ থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে আনার পর কাস্টমস গেটে হাতে-নাতে ধরা পড়ে। তখন শামীমাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, “টাকা তোমার কাছে রাখো, আমি পরে নেব।” পরে দুদক কর্মকর্তারা কাস্টমস হাউসে গিয়ে শামীমার কাছে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অবশেষে স্বীকার করেন।
জানা যায়, হাসিব ২০২০ সাল থেকে কাস্টমস হাউসে এনজিও কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ঘুষের টাকা সহ হাসিব ও কাস্টমস সুপার শামীমাকে আটক করা হলেও রাতেই নাটকীয়ভাবে হাসিবকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরদিন সাংবাদিকদের তীব্র চাপের মুখে ৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শামীমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আটক দেখিয়ে মামলা দায়ের করে যশোর আদালতে।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত