জানাযা ও মহানুভবতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোঃ কামরুল ইসলাম।

সৃষ্টির আবহমান কাল থেকে জীবন – মৃত্যু এই দুইটি ধারা বিশেষ করে মানুষের মধ্যে চলে আসছে যা পৃথিবীর শেষ দিন বা কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে কোন মুসলিমের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর বিশেষ করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে সে সত্যিকারের মুসলিম কিনা তার জানাযা পড়া যাবে কি- যাবে না। আমরা যারা মুমিন মুসলমান আমরা জানি জানাযা একটি ইবাদত এবং লাশের পিছে পিছে কবরস্থান গিয়ে দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করা আরেক টি ইবাদত। প্রথমটি আমরা করলেও দ্বিতীয়টি একান্ত কাছের কেউ না হলে আমরা করি না।আজকাল কোন মুসলিম মৃত্যু বরন করলে তার জানাযা দেওয়া না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর জন্য দায়ী মৃত্যুর পূর্বে তার বিতর্কিত কর্মকান্ড ছাড়া অন্য কিছু নয়।কাজেই মুসলমান হিসাবে আমাদের ঐ ধরনের কর্মকান্ড হতে বিরত থাকা উচিত।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্হায় কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য,দম্ভ অসাম্প্রদায়িকতার নামে ইসলাম পরিপন্হি কর্মকান্ড তার জানাযার নামাজকে সাধারন মুসলমানদের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যা কোন মুসলমানের নিকট কাম্য নয়।জানাযার পর মৃত ব্যক্তির সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যাওয়ার পরিস্কার নির্দেশ রয়েছে হাদীসে।বুখারীর বর্ণনা মতে জানাযার সওয়াব এক ক্বীরাত, আর জানাযা ও লাশের সাথে দাফন পর্যন্ত থাকার সওয়াব দুই ক্বীরাত। প্রতি ক্বীরাতের পরিমাণ হলো ওহুদ পাহাড় সমান।
কেননা তখন মৃত্যুর স্মরণ ও জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি হয় মুসলিম মনে।( মুসলিম) জানাযার পূর্বে
মৃত মানুষের গোসল করানো কাফন পরিধান করা, জানাযার নামাজ এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া।অর্থাৎ কিছু লোকে কাজটি করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবে না হয় সকলেই গুনাহগার হবে।জানাযার নামাজ আপন বা নিকট আত্মীয় পড়ানো উত্তম। যে কেউ জানাযার পূর্বে গোছল দিতে পারবে তবে আপন জন দেওয়া উত্তম।জানাযার পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আয়েশা (রা) কে বলেন: “তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যু বরণ কর, তবে আমি তোমার গোসল দিব।” (আহমাদ )
আর আবু বকর (রা) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক
হা/৬১৬৭) মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোন পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে।গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি সেই ক্ষেত্রে না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।এই টি হাদিস।এর পদ্ধতি হল,উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে।
কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম। আল্লাহ্ বলেন- (কাফের মুনাফেকদের) কখনই জানাযা নামাজ আদায় করবে না। ( সুরা তওবাহ্)। তাহাছাড়া জানাযার উদ্দশ্যে ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা নবী (সাঃ) “ওহুদের যুদ্ধে শহীদদের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে গোসল ছাড়া তাদের পরিহিত কাপড়ে দাফন করা হবে।” (বুখারী) তাহাছাড়া তাদের জানাযা ও সময়ে পড়েন নি। (বুখারী ও মুসলিম)।যদিও
মুসলিম জাতি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট জাতি।সর্বশ্রেষ্ট জাতি হয়ে ও আমরা আজ নিষ্পেসিত,নির্যাতিত।অতুলনীয় নুর মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর উম্মত হয়ে ও আমাদের আজকের এই করুন অবস্হা।আমাদের বুঝতে হবে মৃত্যু আমাদের জীবনাবসানের নাম নয় বরং মৃত্যু আল্লাহর সৃষ্টবস্তু। পবিত্র কোরানে জনাযা নামাজ ও দোয়া করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা আত্ তওবায় বলেন-
মুশরিকরা যোগ্যতা রাখে না আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর স্বীকৃতি দিচ্ছে। এদের আমল বরবাদ হবে এবং এরা আগুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।অন্যদিকে সুরা আত্ তওবাহর ৮৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রসূলের প্রতিও। বস্তুতঃ তারা না ফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে।
কোন মুসলমান যদি পবিত্র ওমরা বা হজ্জ্ব করেন কিন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথা সময়ে আদায় না করেন এমনকি মুখে দাঁড়ি রাখেন ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড করেন,আলেম সমাজ ও দ্বীন কে অবজ্ঞা করেন সে কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।তবে কোন মুমিন মুসলমান যদি না জেনে যদি কোন অবজ্ঞাকারীর জানাযার নামাজ আদায় করেন তাতে তার গুনাহ হবে না।তবে রাষ্ট্র বা সমাজ বা তার নিকট আত্মীয় মৃত ব্যক্তির ঈমানের সাক্ষী দিলে তার জানাযার নামাজ পড়ানো যাবে।আমাদের মনে রাখা উচিত যোগ,বিয়োগ এর একমাত্র নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহ।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত