করোনা ভাইরাস যুদ্ধে কি আমরা জিতে যাবো আর জিতে যাবে বাংলাদেশ? 

নিজস্ব প্রতিবেদক

  কলম সৈনিক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান শ্রাবণ

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেনঃ মাথায় পড়িলে তবে বলে বজ্র বটে। অর্থাৎ বাজ মাথায় না পড়া পর্যন্ত লোকে বলে এটা মেঘের ডাক বা গর্জন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পও বলেছিলেন, এ রোগ এমন কিছু নয়, চলে যাবে, এখন তিনি তার দেশে লাশের মিছিল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমাদের দেশের কোন এক এলাকার সাধারণ মানুষের বাইরে ঘোরাঘুরি সম্পর্কে কয়েকজন সাধারন ব্যক্তির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি ভয় পান না, ঘোরাঘুরি করছেন? উত্তরে ঐ ব্যক্তিগনের একজন বলেছিলেন, আমি করোনায় আক্রান্ত হলে বুঝতাম আসলে করোনা কি রকম, হয়নি বলে বুঝিনা তাই বাইরে ঘুরি, এই মহাজ্ঞানীকে কার সাধ্য আছে বোঝানোর? আমরা বাঙ্গালী খুব আবেগী জাতি। আক্রান্ত হলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গিয়ে বুঝবো আমরা কী ভুল করেছিলাম। কিন্তু তখন যে সময় আর অবশিষ্ট থাকবে না!

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে যেকোনো সচেতন মানুষই বুঝতে পারছেন যে, শক্তিধর দেশগুলো শক্তি দেখানোর এক নগ্ন উন্মাদনায় ভয়াবহ যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়টা থেকে করে আসছে। সে সময় থেকে দেশগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বা শ্রেষ্ঠত্ব ছিনিয়ে আনার জন্য ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞানের যেমন উৎকর্ষতা বেড়েছে, তেমনি গবেষণায় ও অস্ত্রের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ অস্ত্রের পরিবর্তে আণুবিক বা পারমাণবিক অস্ত্রের গবেষণা চালাচ্ছে, যার কারণে প্রচুর মানুষ মারা যেতে পারে। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি ক্ষমতালোভী দেশগুলো। গোপনে তারা জীবাণু অস্ত্র নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে, যা বিভিন্ন প্রটোকল ও চুক্তির মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

করোনাভাইরাস কোনো সাধারণ ভাইরাস নয়,এটি শক্তিধর দেশগুলোর চরম হিংসাত্নক আর নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ! এ ভাইরাস আসলে Biological Weapon বা জীবাণু অস্ত্র, যা নিয়ে গবেষণা করে আসছিলো কোন এক বা একাধিক শক্তিধর দেশ। হয়তো এত দ্রুত ব্যবহারের ইচ্ছে এদের ছিল না। কিন্তু গবেষণা করতে গিয়ে ভুলবশত ঐ গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাসের ধ্বংসাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন।
জীবাণু অস্ত্র হলো – জৈবিক যুদ্ধবিগ্রহ তথা জীবাণুভিত্তিক রণযুদ্ধে মানুষ হত্যা কিংবা বিকলাঙ্গ করার উদ্দেশে সামরিকযুদ্ধে জৈবিক বিষাক্ত পদার্থ কিংবা সংক্রামক অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের ব্যবহার। প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানবকল্যাণ আইনে এবং নানান আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে জৈব-অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সশস্ত্রযুদ্ধে জৈব-পদার্থের ব্যবহার একপ্রকার যুদ্ধাপরাধ।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু সে জীবাণুর প্রতিষেধক ও আবিষ্কার হয়েছিল বা আগেই প্রতিষেধক তৈরী করে তারপর প্রয়োগ হয়েছিলো স্বল্প পরিসরে। কিন্তু করোনাভাইরাস যদি সত্যিই ভুলবশত ছড়িয়ে পড়ে আর তার যদি প্রতিষেধক আগে থেকে তৈরী না হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবী ধ্বংসে বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না।
ইতিহাস ও নানা সূত্রের আলোকে জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের একদল যোদ্ধার হাত ধরেই এই জীবাণু অস্ত্র প্রথম পরিচিতি পায়। সে সময় হিত্তিত নামে পরিচিত জাতির যোদ্ধারা কোন শহর দখল করার আগে কয়েকটি ভেড়া ঐ শহরে ছেড়ে দিয়ে আসতো, যাদের মাঝে র‌্যাবিট ফিভারের জীবাণু আগে থেকেই পুশ করা ছিলো। কিছু অধিবাসী ভেড়াগুলো পেয়ে খুশি হতো আর কিছুদিনের মধ্যেই শহরের অর্ধেক মানুষ মারা যেত, যার ফলে হিত্তিতদের ঐ শহর দখল করা সহজ হয়ে যেত।
এর বহু শতাব্দী পর ১৩৪৬ সালে তাতার বাহিনীর মাঝে আবার জীবাণু- যুদ্ধের প্রমাণ পাওয়া যায় । তখন প্লেগ রোগে বহু মানুষ মারা যায়। জানা যায়, তাতার বাহিনী প্লেগ রোগে মৃত সৌন্যদের কাফা শহরের (ক্রিমিয়ান উপদ্বিপ) মধ্যে রেখে সব প্রবেশপথ বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিলো। ১৭৬৩ সালে ব্রিটিশরা গুটিবসন্তে আক্রান্ত রোগীর কম্বল নেটিভ আমেরিকানদের বিতরণ করে অনেক মানুষ হত্যা করেছিলো। ১৭৯৭ সালে নেপোলিয়ন ইতালির মান্টুয়াতে বন্যার সৃষ্টি করেন, যেন ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।

১৯০০ সালের দিকে যখন অণুজীব-ভিত্তিক সংক্রমক রোগের উদ্ভব হলো, তখন থেকেই আধুনিক জীবাণু অস্ত্রের ধারণার সূচনা। ১৯২৫ সালে জেনেভা প্রটোকলে জীবাণু অস্ত্র গবেষণা ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলেও উন্নত দেশগুলোতে এর ব্যবহার থেমে থাকেনি। ১ম , ২য় বিশ্বযুদ্ধে ও ১৯৭২ সালে চীনের ওপর জাপান জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সৈন্যরা চীনের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০০০ নলকূপে কলেরা এবং টাইফয়েড এর জীবাণূ মেশায়, যেন তারা আক্রান্ত হয়।সে সময় ব্রিটিশ সরকার স্কটল্যান্ডের গ্রুইনার্ড দ্বীপে ভয়ংকর অ্যানথ্রাক্স জীবাণুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের পরীক্ষা চালায়। এ জীবাণু সংক্রমণের পরীক্ষাটি এতই ভয়ংকর ছিলো যে পরবর্তী ৪৮ বছর ধরে দ্বীপটিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়েছে।

১৯৩০ সালে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের পরিচালিত এক পরীক্ষার কারণে এরাল সাগরের একটি দ্বীপ চিরতরে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যেখানে র‌্যাবিট ফিভার, প্লেগ, টাইফাস এবং ভেনিজুয়েলান ইকুইন এনসেফালইটিস এর মতো একাধিক জীবাণু ছড়ানো হয়েছিলো। এছাড়া ১৯৭১ সালে রাশিয়ায় অস্ত্র হিসেবে তৈরী গুটিবসন্তের জীবাণু দূর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রবল চাপের মুখে ১৯৯২ সালে রাশিয়া জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা মেনে নেয়।অতীতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে চেরনোবিল আণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রে দুর্ঘটনার ফলে বিশ্বের এক বিশাল এলাকায় আণবিক তেজস্ক্রিয় ও বিপজ্জনক ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং ক্যান্সার, লিউকেমিয়াসহ নানা দুরারোগ্য রোগের বিস্তার ঘটেছিল। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকা সাদ্দামকে এই রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করেছিলো, আর তা ব্যবহার করায় প্রায় ১৫ লাখ ইরানির মৃত্যু হয়েছিল।

বর্তমান করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেক গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরাই বলছেন, করোনাভাইরাস মানুষের সৃষ্ট রোগ। তেমনি দাবি করছেন, এইচ আইভি এইডস এর আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী চিকিৎসক ড. লুক মন্টাগনিয়ার। তিনি বলেছেন, দুর্ঘটনাবশত ভাইরাসটি ল্যাব থেবে বাইরে এসেছে এবং তা উহানের ল্যাবে তৈরী হয়েছে। এরই মধ্যে চীনা গবেষকরা স্বীকার করেছেন, তারা এইচআইভির ভ্যাকসিন তৈরীতে করোনাভাইরাস ব্যবহার করেছে।কিন্তু চীনের বিদেশমন্ত্রীর মুখপাত্র লিঝিয়ান ঝাও এর দাবি- ‘‘আমেরিকা থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন,করোনা আক্রান্ত মার্কিন সেনারা উহানে আসেন মিলিটারী ওয়ার্ল্ড গেমে যোগ দেওয়ার জন্য ।যা ওখানে তাদের থেকেই তা চীনে ছড়িয়ে পড়ে।” তিনি মার্কিনিদের সাবধান করে দেন, করোনা নিয়ে চীনের ঘাড়ে দায় চাপানো বন্ধ করুক আমেরিকা।

এদিকে মার্কিন গবেষক ফ্রান্সিস বয়েল (Francis Boyle)দাবি করেন,‘এটা চীনের উহান BSL-4 ল্যাবে তৈরী হয় এই জৈব মরণাস্ত্র (Biological Weapon) যা ওখান থেকে অনিচ্ছকৃতভাবে/অসাবধানতায় লিক হয়ে যায় এবং যা তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। তাহলে কি ফ্রান্সিস বয়েল ট্রাম প্রশাসনের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন? , কিন্ত ফ্রন্সিস বয়েল তেমনটা করার কথা না। কারণ, ২০১৮ সালে আমেরিকা যখন সিরিয়া আক্রমণ করে সেই আমেরিকার নীতি ও ট্রাম সরকারের ও উনি সমালোচনা করেছিলেন। তিনি চিরদিন-ই জৈবমরণাস্ত্রের বিরোধী, সেই মতেই ১৯৮৯ সালে Biological Weapon Anti Terrorism Act-1989 এর খসড়া তৈরী করেছিলেন এই গবেষক। তিনি একাধারে আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক এবং মানবাধীকার কর্মী।
কিউবা সবসময় অভিযোগ করে আসছে আমেরিকা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করছে।
চীনের প্রথম যে ভাইরোলজিস্ট ডাক্তার ড.ওয়েংলিয়ান – সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে, নভেম্বর মাসেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তার পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো এবং চুপ থাকতে বলা হলো কেন ? কেনই বা তিনি কিছুদিন পর নিজেই করোনা সংক্রমণে মারা গেলেন? এটা অনেকের প্রশ্ন।

এদিকে সময় টিভির সংবাদে দেখলাম, ফিলিস্তিনিদের করোনা পরীক্ষার ক্লিনিক ধ্বংস করলো ইসরাইল। তাহলে কি বলবো ইসরাইলেরও হাত আছে করোনা ভাইরাস তৈরীতে ? তা না হলে করোনা পরীক্ষার ক্লিনিক কেন ধ্বংস করতে যাবে? অন্য এত সব স্থাপনা রেখে যার অধিকাংশ তারা আগেও ধ্বংস করেছিল। অনেক সন্দেহ ডানা বাঁধে আসলে কারাই এ ধ্বংসাত্মক কাজ করলো।অনেক আগে থেকেই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বকে সচেতন করার জন্য বুদ্ধিমান লেখক ও চলিচ্চিত্র নির্মাতারা অনেক উপন্যাস, গল্প এবং সিনেমা তৈরী করেছেন যেন অন্ধদের চোখ খোলে ! এরকম কয়েকটি হলো- ১৯৮১ সালের আমেরিকান থ্রিলার উপন্যাস- ‌‌‍‌‍‌’দ্য আইজ অব ডার্কনেস’ লেখক- ডিন কুনৎজ। ভাইরাসের নাম উহান-৪০০ যদিও প্রথমে নাম ছিল গোর্কি-৪০০(গোর্কি,রাশিয়া) । ঠিক ৩৯ বছর পর গোটা বিশ্বে মরণখেলায় নেমেছে যে ভাইরাসটি, সেই করোনার উৎপত্তিও ঘটনাক্রমে উহানেই। মার্কিন লেখক কি ইচ্ছে করেই চায়নার বা রাশিয়ার নাম ব্যবহার করেছেন ? এ ভাইরাসটি মানুষের তৈরী অণুজীবের চারশতম সংস্করণ হওয়ায় এমন নামকরণ। রেসিডেন্ট ইভিল এর ছয়টি সিরিজে জৈব রাসায়নিক অস্ত্র এবং জেনেটিক্যাল মিউটেশন কীভাবে মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনবে তা দূর্দান্তভাবে চিত্রায়িত হয়েছে এই বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন এবং হরর থ্রিলার ছবিতে। এটি দফায় দফায় মুক্তি পেয়েছিলো ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এছাড়া, এরকম আরো অনেক সিনেমা আছে যার মধ্যে Contagion (2011), Flu(2013) কুরিয়ান , Virus (2019), 7aum arivu (2013) তামিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

আমাদের শরীর করোনা ভাইরাসের জন্য কতটুকু উপযুক্ত?  আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত ২০০ প্রজাতির বিলিয়ন বিলিয়ন ভাইরাস প্রবেশ করে আর বেশিরভাগই স্বেত রক্তকণিকার আক্রমণে মারা যায়। সমস্যা হলো যখন শক্তিশালী ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তখন শরীরের এন্টিবডি প্রথমে একে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু  শক্তিশালী হলে একে মেরে ফেলা সম্ভব হয়না, তখন শরীর ভাইরাসটিকে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে এবং এন্টিবডি ভইরাসটিকে গলা ও নাক পর্যন্ত নিয়ে যায় যেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ভাইরাস কোন খাবার খায়না। কিন্তু শরীরের সেল ভেঙ্গে সেখান থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এর ডুপ্লিকেশন অর্থাৎ ১টি থেকে ২টি তারপর ৪,৮,১৬ এভাবে জ্যামিতিক আকারে বাড়তে থাকে।
ভয়ের কথা হলো, প্রতিদিন যে ২০০ প্রজাতির লক্ষ-কোটি ভাইরাস আমাদের দেহে ঢুকে তার মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ‘রাইনো ভাইরাস’ যার আক্রমণে আমাদের সর্দি-কাশি থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। আর এ শ্রেণীরই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভাইরাসটির নাম বর্তমান আতঙ্ক কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। যেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়াই শরীরকে কাবু করে ফেলে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সেখানে করোনাভাইরাস তো মূর্তিমান এক আতঙ্ক !

মানুষই মানুষের শত্রু সৃষ্টি করে। তারপর তা যখন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে ওঠে, তখন তাকে ধ্বংস করার জন্য হিমশিম খায় ! করোনার ক্ষেত্রেও কি তাই হতে চলছে ? করোনা ভাইরাসকে তাহলে কি পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়েছি আমরা মনুষ্যজাতি? তা আবার আমাদেরই ধ্বংসের জন্য ! এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়েই কি স্ফিংসের মতো নতুন বিশ্ব আবার বেরিয়ে আসবে ? এই ভবিষ্যদ্বাণী ও করেছেন কিছু সমাজবিজ্ঞানী। তারা বলেছেন, ‘এই ভাইরাস বিশ্বমনবতাকে চরম বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাবে কিন্তু পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটাতে পারবে না, তার ভগ্নাংশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সহায়তায়ই বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠন হবে।রবীন্দ্রনাথ তাঁর দুঃসময় কবিতার মর্মার্থে বোঝাতে চেয়েছেন- ‘জীবনে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, জীবনের পর্যায়ে এক অবস্থার অবসান হতে চলছে , এখন নতুন পথে একাকি যাত্রা করতে হবে। সমস্ত ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রা নতুন, সুতরাং অপরিজ্ঞাত এবং সে জীবনযাত্রার প্রত্যেক ব্যক্তিকে একাকি শঙ্কিত চিত্তে অগ্রসর হতে হবে।

মহামারি ও দূর্যোগে ধৈর্যধারণ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ(সঃ)। হাদিসে এসেছে- ‘যদি কেউ মহামারি প্লেগে তাগদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক নিজ আবাসস্থলে ধৈর্যধারণ করে অবস্থান করেন, তবে আল্লাহ তাআলা ওই প্রত্যেক মুমিনকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) আরেক হাদিসে রোগীর সাহায্য সহযোগীতা করাও নেয়ামত লাভের অন্যতম মাধ্যম বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস গত ২৩ মার্চ সারা বিশ্বে অতিদ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান , তিনি বলেন, এখন অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং একজোট হয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের জীবনের আসল লড়াই লড়তে হবে। বন্দুক, কামান আর বিমান হামলা বন্ধ করুন।

ওনার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে গেলে, আমাদের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে সেই যুদ্ধ হবে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক চলা, শুধু ঘরে থাকা। আর নিরাপদে থেকে ধৈর্য্য ধারণ করা। তাহলেই আমরা জিতে যাবো আর জিতে যাবে বাংলাদেশ।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত