
আজকের কর্ণফুলী ডেস্কঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার মুজিব কোট বানানোর হিড়িক পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন টেইলার্সগুলোতে। হঠাৎ করে মুজিব কোট বানানোর হিড়িক পড়ে যাওয়াও রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রের খবরে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে সহিংসতা সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীন দলের উপর দায় চাপানোর জন্যই বিএনপি-জামায়াত এই কৌশল অবলম্বন করেছে। এদিকে নির্বাচনের প্রাক্কালে নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করেই মুজিব কোট তৈরি ও ব্যবহারকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও দায় চাপানোর কৌশল দাবি করে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে রাজধানীর নীলক্ষেত, মিরপুর শাহ আলী মার্কেট, দৈনিক বাংলা মোড় এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের বিভিন্ন টেইলার্স ঘুরে এই চিত্র দেখা গিয়েছে। তবে মুজিব কোট তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা অসঙ্গতি দেখা দেয়ায় বিশদ অনুসন্ধান করে মুজিব কোট বানানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে একাধিক ভীতিকর ও ষড়যন্ত্রের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবির প্রতি সমর্থন দেখিয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কালো কোটে ৬টি বোতাম ব্যবহার করতেন। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তড়িঘড়ি করে বানানো মুজিব কোটগুলোতে কোনটিতে ৫টি আবার কোনটিতে ৪টি বোতাম দেখা গেছে। মুজিব কোটের গুরুত্ব না জেনেই অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করছে বিএনপি-জামায়াত চক্র।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, কুমিল্লা ও নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, যশোরের বিভিন্ন টেইলার্সে হঠাৎ করে মুজিব কোট তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। পাশাপাশি চলতি ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এসব কোটের ডেলিভারি দেওয়ার জন্য টেইলার্স মালিকদের বিশেষ তাগাদা দিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুজিব কোট তৈরির নির্ধারিত মূল্য যেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, সেখানে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পরিশোধ করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য টেইলার্স মালিকদের পিছু পিছু ঘুরছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। গোপন সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশব্যাপী সহিংসতা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্যই মুজিব কোট তৈরির হিড়িক পড়েছে।
বিষয়টি সত্যতা যাচাই করে নীলক্ষেতের সনজিদা ফ্যাশন টেইলার্স এর মালিক তোফা মিয়া বলেন, বিগত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে মুজিব কোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামালেও নীলক্ষেত থানা যুবদলের এক নেতার মুজিব কোট তৈরির অর্ডার পেয়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। বিএনপি কর্মীদের কখনই মুজিব কোট তৈরি বা পরতে দেখিনি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় আমি আরো কয়েকজন টেইলার্স মালিকদের সঙ্গে কথা বলেও সদুত্তর খুঁজে পাইনি । আমি ভয় পাচ্ছি, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতে কর্মীরা হয়তো রক্তপাত ঘটিয়ে সরকারের উপর দায় চাপাতেই ব্যতিক্রমী এই কৌশল অবলম্বন করেছে। নির্বাচনে রক্তপাত ও ষড়যন্ত্রের আভাসে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত।
বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দাবি করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মতো অবিসংবাদিত নেতাকে নিয়ে এমন ঘৃণ্য রাজনীতি করা হবে, সেটি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। আমি জানতে পেরেছি, স্বাধীনতাবিরোধী, পরাজিত শক্তির এজেন্ট বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে সহিংসতা চালিয়ে, রক্তপাত ঘটিয়ে সরকারি দলের উপর দোষ চাপাতেই মুজিব কোট নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গাধার দলেরা জানে না, ৬ দফার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কালো কোটে ৬টি বোতাম ব্যবহার করতেন শেখ মুজিব। অথচ রাজনৈতিক জ্ঞানহীন বিএনপি-জামায়াতের দোসররা না জেনেই ৪-৫টি বোতাম দিয়ে কোট তৈরি করে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারে মিশে গিয়ে হামলা-সহিংতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। সরকারের যাবতীয় ইতিবাচক অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিতে বিএনপি-জামায়াত এমন ঘৃণ্য পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের সাধারণ মানুষের কাছে হিংসাত্মক রূপে তুলে ধরতেই বিএনপি-জামায়াতের মতো পরাজিত শক্তিরা মানুষের গণমানুষের ইমোশন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। সরকার ও জনসাধারণকে বিএনপি-জামায়াতে এসব চক্রান্ত রুখে দিতে সচেষ্ট হতে হবে।