
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই( রাঙামাটি) প্রতিনিধি :
বিশ্ব আজ এক অদৃশ্য শক্তির কবলে পড়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। চীনের উহান রাজ্য থেকে মরনঘাতি করোনা ভাইরাস আজ প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে মহামারিতে রূপ নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পরেও করোনা প্রভাব এখনোও কমছেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার একটি উপায় সেটি হলো নিজ নিজ বাড়িতে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে অবস্থান করা এবং মুখে মাস্ক পড়ে চলাচল করা। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের প্রভাব চোখে পড়ার মতো কেননা প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ এবং তার সাথে অনেক মানুষ এই ভাইরাসের প্রকোপে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছে। তবে এই মহামারি করোনা ভাইরাস যখন থেকে বাংলাদেশে এসেছে তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যত লগডাউন ঘোষনা করেছে। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৎক্ষনাৎ বন্ধ ঘোষনা করে দিয়েছে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ হতে। এরপরেও ২০২০ সালের নভেম্বর এর দিকে এর প্রকোপ কিছুটা কমলে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ২০২১ সালের মার্চে সীমিত পরিসরে স্কুল খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিলেও বিগত মার্চ এবং চলতি এপ্রিল মাসে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে, ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।
রাঙ্গামাটির জেলার কাপ্তাই উপজেলা শিক্ষা সমৃদ্ধে ভরপুর একটি উপজেলা। প্রতিবছর এই উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষা, জাতীয় পুরষ্কার, মেধা অন্বেষন সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেধাতালিকায় অবস্থান করে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কাপ্তাই উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ১ বছর ১ মাস হতে চললো। স্কুল কলেজ গুলো বন্ধ হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যেমনটা মিস করছে তেমনটা মিস করছে তাদের বন্ধু বান্ধবীদের।। বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা নেই। ক্লাসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেই পড়াশুনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সব কিছু বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারপরও থেমে নেই জীবন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার কাছের মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করে তুলছেন।
কাপ্তাই উপজেলা কয়েকটি স্কুল এবং কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেমন কাটছে এই গৃহবন্দী জীবন তাদের অনুভুতি গুলো তুলে ধরেছেন এই প্রতিবেদকে:
কর্ণফুলী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাসাসিং মারমা, একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাফরিন জানান, দীর্ঘ ১ বছর ১ মাসেরও অধিক সময় ধরে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না, খুব মিস করছি সহপাঠীদের। ঘরে বসে একগেঁয়েমী লাগছে।
কাপ্তাই নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সায়েমা তাসনিম বলেন, কতদিন হয়ে গেলো এলার্মের আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে প্রাণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয়না। কি এক সময় এল, এমনটা কি কেউ ভেবেছিলো! পুরো পৃথিবী আজ থমকে গেছে, নেই কোন কোলাহল, নেই কোন ব্যস্ততা। সর্বশ্রেষ্ট মানুষ হয়েও আমরা আজ একটি ক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে পরাস্ত। তবে একমাত্র বাড়িতে থেকে এই করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব। তাই আমি বাড়িতে থেকে এইসময় লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আর আমাদের কাপ্তাই বিএন স্কুল এন্ড কলেজ ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করায় আমরা অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারছি। এই ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখন প্রত্যাশা শুধু একটায় নির্মল, সুস্থ বাতাসের। যেন আমরা সবাই প্রাণভরে নিশ্বাস নিয়ে আবার পথ চলতে পারি। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন এটাই কামনা।
এদিকে কাপ্তাই নৌবাহিনী স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র অর্নিবান দত্ত জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অস্থির পুরো বিশ্ব। দেশে চলছে কার্যত লগডাউন। আমরা সবাই করোনা মোকাবেলায় নিজ নিজ বাড়িতে অবস্খান করছি। অনেক দিন বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে বন্ধুদের সাথে দেখা না হওয়ায় খুব বিরক্তিবোধ করছি। এই লগডাউন অবস্থায় বাসায় থেকে লেখাপড়া করছি। এছাড়া আমাদের বিদ্যালয় ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করায় সেখানে অংশ নিয়ে ভালো লাগছে। এছাড়া সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। এইভাবে বাসায় সময়টা কাটছে। এ মহামরি দুর্যোগে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া ও মাস্ক পরে চলাফেরা করতে হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা আবার এই সংকট কাটিয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরে পাবো।