
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই( রাঙামাটি) ঃ
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ডের রাইখালী বাজার এলাকা। কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেষেঁ অবস্থিত এই এলাকা। পাহাড়ী বাঙালী মিলে ৩ শতের অধিক পরিবারের বসবাস এইখানে । জনসংখ্যা প্রায় হাজার খানেক। রাইখালী বাজারে প্রায় ৬০ টির মতো বিভিন্ন পণ্যের দোকান আছে। আবার সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আর রবিবার ২ দিন বসে এইখানে সাপ্তাহিক বাজার। করোনার কারনে এখন বাজারে কিছুটা মন্দাভাব চললেও বেশ জমজমাট বাজার বসে এইখানে। বাজারে পশ্চিম পাশে শতবর্ষী রাইখালী ত্রিপুরা সুন্দরী কালি মন্দির, পূর্ব- দক্ষিণ পাশে রাইখালী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বাজারে মাঝখানে মগদেশ্বরী মন্দির এবং বাজারের দক্ষিণ পাশে পাহাড়ের উপর চন্দ্রঘোনা থানা অবস্থিত।
এই এলাকায় নাগরিক সুযোগ সুবিধা সব থাকলেও একটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ এবং হতাশা। তাদের একমাত্র প্রাণের দাবি খাবার পানির সংকট নিরসন করা। বাজারে মাঝখানে একটি মাত্র টিউবওয়েল আছে যা হতে এই ৩ শতের অধিক পরিবার খাবার পানি সংগ্রহ করে, ফলে এক কলসি পানির জন্য একটি পরিবারকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। তাও এক কলসি পানি পূর্ণ করতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে পাশ্ববর্তী অনেক এলাকা হতে রিক্সা কিংবা ভ্যানে করে পানি সংগ্রহ করে থাকে। আবার সাপ্তাহিক বাজারে ক্রেতা বিক্রেতারা আসলে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় পয়ঃনিষ্কাশন। বিশেষ করে বাজারে আগত মহিলাদেরকে মানুষের ঘরে গিয়ে পানি খাওয়া হতে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করতে হয়।
প্রসঙ্গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাঙামাটি জেলা পরিষদের বাজার প্রকল্প হতে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই এলাকার খাবার পানির সংকট নিরসনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় একটি ওয়াস ব্লক স্থাপন করা সহ একটি জেনারেটর ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের গুনগত মান নিন্ম মানের হওয়ায় এবং পানির সঞ্চালন লাইনের নিন্ম মানের পাইপ ব্যাবহার করার কারনে কিছুদিনের মধ্যে এটা অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে পানির অভাবে ওয়াস ব্লকটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
গত শনিবার সকাল ১০ টায় এই প্রতিবেদক রাইখালী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখতে পাই, বাজারে একটি মাত্র টিউবওয়েল হতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এলাকার বাসিন্দারা খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। অনেকে এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সিরিয়াল পাই নাই বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলেন, খুব কষ্ট করে চাপ দিয়ে এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে আধা ঘন্টা সময় পার করেছেন।
পানি সংগ্রহ করতে আসা রাইখালীর বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন, লক্ষ্মী রানী, রীনা দাশ ও জুবলি দে সহ অনেকে জানান, একটি মাত্র টিউবওয়েল এর মাধ্যমে আমাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
রাইখালী বাজারে বাসিন্দা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বির্দশন বড়ুয়া বলেন, আমরা রাঙামাটি জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও এইখানে পানির সমস্যা সমাধান করতে পারি নাই।
রাইখালী বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার বলেন, রাইখালী বাজারে পানির সমস্যা দীর্ঘ দিনের। একটি টিউবওয়েল এর উপর নির্ভরশীল পুরো বাজারের ৩ শতের উপর পরিবারের। আমরা এর সমস্যা সমাধান চাই।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, রাইখালী বাজারে এই সমস্যা আমি সরজমিন গিয়ে দেখে এসেছি। এইখানে একটা মাত্র টিউবওয়েল হতে শত শত পরিবার পানি সংগ্রহ করে। উপজেলা পরিষদ হতে অচীরেই এই এলাকায় একটি ডিপটিওবল বসিয়ে খাবার পানির সংকট নিরসন করা হবে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মন বলেন, এলজিইডি ঐ এলাকায় একটি সড়কের কাজ করতে গিয়ে জেলা পরিষদের এই প্রকল্পের পাইপ লাইনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। এলজিইডি আমাদেরকে এই পাইপ লাইন মেরামত করে দিবে বলেছে।