
মোঃ আহসান হাবিব (বাপ্পি) জয়পুরহাট
জানুয়ারি এক তারিখে বই উৎসবের মাধ্যমে সরকার বিনামূল্যে শিশু-শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া শেষ করলেও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৩৪টি বে-সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে অতিরিক্ত বই কিনতে বাধ্য করানো হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভাবনা থেকে শিশু-শিক্ষার্থীদের কাঁধে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা তুলে দিচ্ছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। আবার সেই সঙ্গে তারা নিচ্ছেন প্রতি বছর স্কুল ভর্তিসহ বিভিন্ন কারণে অকারণে অতিরিক্ত অর্থও। শিশু-শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগের ওজন কমাতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমানো জন্য উচ্চ আদালতে সু-নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে স্কুল-কর্তৃপক্ষরা কোমলমতি শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্ধারিত বই ছাড়াও কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের হাতে বাড়তি নতুন বইয়ের তালিকা তুলে দিচ্ছেন উপজেলার ঐসব বে-সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝার কারণে উপজেলার হাজার হাজার কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীরা শারীরিক চাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও বয়ে বেড়াচ্ছে আর অভিভাবকদের বহন করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যয়ভার। জয়পুরহাট নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার উদয়পুর, মাত্রাই, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে যেখানে সেখানে নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে অনুমোদনবিহীনভাবে ছোট ছোট বসত-বাড়ি রুম ভাড়া নিয়ে কেজি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের নামে বে-সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এক শেণির এলাকার অসাধু ব্যক্তিরা। সরকারি নীতিমালা না মেনেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে একই স্থানে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুল-কর্তৃপক্ষরা।
ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অদক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে করানো হচ্ছে পাঠ দান। তারা মানছে না পড়াশোনার কোন নিয়ম কানুন। কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত করে দিয়েছেন কোন শ্রেণিতে কোন বই পড়তে হবে। এর বাইরে পাঠ্য বই না করার জন্য আইনও (এনসিটিবি আইন-১৯৮৩, ধারা-১৫.১) রয়েছে।
উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠানগুলো এইসব কিছুই মানছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বই, গাইড, খাতা ও পানির বোতলসহ টিফিনবাক্স মিলিয়ে স্কুল ব্যাগের ওজনের চেয়ে সেই শিশুর শরীরের ওজনের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে বেশি বহন করছে। তারা স্কুল ব্যাগের ভাড়ে বাঁকা হয়ে বা অভিভাবকের সহযোগিতা নিয়ে স্কুলে যায়। শিশু-শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগের ওজন কমাতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমানো জন্য উচ্চ আদালত থেকে বলা আছে ‘একজন শিশুকে কখনো তার নিজের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি বোঝা বইতে দেয়া যাবে’ এই সু-নির্দেশনা থাকলেও কেজি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল-কর্তৃপক্ষরা অমান্য করে কোমলমতি শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। এর ফলে অতিরিক্ত বইয়ের কারণে স্কুল ব্যাগের ওজন ফলে শত শত কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের শারীরিক চাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও বয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলার বে-সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৩০ জন শিশু-শিক্ষার্থীরা জয়পুরহাট নিউজ টোয়েন্টিফোর’কে বলে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে নির্ধারিত বই ছাড়াও তাদের স্কুল থেকে অতিরিক্ত বই দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত স্কুল খোলা রেখে জোর করে ওইসব বইগুলো তাদেরকে পড়ানো হচ্ছে। অনেক সময় তারা পড়তে না চাইলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদেরকে প্রহার করে। এতে করে তাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাসহ মানসিক চাপের মাঝে থাকে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, বিভিন্ন কাজে তাদেরকে ব্যস্ততা থাকতে হয়। ফলে তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাড়তি বইয়ের বোঝা বইতে হচ্ছে তাদের সন্তানদেরকে আর তাদেন মত অনেক অভিভাবকদের বহন করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যয়ভার। তাদের মতে-সঠিক তদারকি না থাকায় আইন মানছে না এলাকার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো।
উপজেলার কয়েক জন বই বিক্রেতারা জানান, এলাকার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশনীগুলো যোগসাজশ করে পাঠ্যসূচিতে অতিরিক্ত বই যুক্ত করেছেন। তাই তারা বাধ্য হয়ে ওইসব বই বিক্রি করছেন। তবে, এইসব বিষয়ে অভিভাবকদের অনেক সচেতন হতে হবে বলে তারা মনে করেন।