
আজকের কর্ণফুলী ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিনবার ও সর্বমোট চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচলনার দায়িত্ব নিয়েছেন। নতুন করে নেয়া দায়িত্বের শুরুতেই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং এর অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট মহলকে ঘুষ-দুর্নীতি বিরোধী লড়াই করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের ঘোষণা পাওয়া মাত্রই স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যেখানে দুদকের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়েছে যে কোনও দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের ছাড় দেবে না সংগঠনটি। সোমবার দেশব্যাপী পরিচালিত একাধিক অভিযানে ঢাকাসহ ৮ জেলার হাসপাতালে অধিকাংশ চিকিৎসককে অনুপস্থিত পেয়েছে দুদক। এরমধ্যে খোদ রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ৪০ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৬২ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। বিষয়টিকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনৈতিক। তাদের মতে, এটা ‘অন্যায়-অগ্রহণযোগ্য’। আর মন্ত্রণালয় বলছে, চিকিৎসকদের এই অনুপস্থিতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সীমাহীন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে সারাদেশের ১০ জেলায় অভিযান চালিয়েছে দুদকের বিশেষ কয়েকটি দল। এ সময় দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার কারণে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে হাতেনাতে ধরাসহ শাস্তিস্বরূপ তাৎক্ষণিক বরখাস্তও করেছে দুদক। যেখানে অন্যতম ঘটনা হলো ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চলাকালে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন হাসপাতালের বেয়ারা আবু মুসা ভূঁইয়া। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সারাদেশে অভিযান চলাকালে দুদক দেখতে পায় ঢাকার ভেতরে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির হার ৪০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসকের উপস্থিতির হার ৬১ শতাংশ। অভিযানে যাদেরকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পাওয়া যায়নি, তাদেরকে চিঠি দেয়া হবে বলে দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটজন ডাক্তার ডিউটিতে থাকার কথা পাওয়া গেছে মাত্র ২ জনকে। রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জনের মধ্যে ৩ জন, দিনাজপুর সদর হাসপাতালে ২৪ জনের মধ্যে ৮ জন, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ১৫ জনের মধ্য মাত্র ৬ জন, মুক্তাগাছায় ১০ জনের মধ্যে ৮ জন, কুমারখালীতে ৮ জনের মধ্য ৫ জন পাওয়া গেছে। পাবনা সদর হাসপাতালে ৩৫ জন অনুপস্থিত, আটঘরিয়ায় ৪ জন, ঢাকা মহানগরের কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতালে ১১ জন অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। রোগীদের বরাবরই অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকদের নৈতিক অবক্ষয় চরমে। ডাক্তারদের অনুপস্থিতি, সেবা, আচরণ, ওষুধের সরবরাহ ও চিকিৎসার মানেও রয়েছে প্রশ্ন। বারবার অভিযোগ করেও এতোদিন কোনো সমাধান পায়নি বলে অনেকেরই বক্তব্য রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দুদকের এমন অভিযানে চিকিৎসা খাতে সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে আশার আলো দেখছেন সেবা গ্রহীতারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের স্বাস্থ্যসেবা এরকম সীমাহীন দুর্নীতির কবলে পড়বে সেটা সাধারণ মানুষ ভাবতে পারে না। জনগণের একটাই চাওয়া, তা হলো যথাযথ সেবা পাওয়া।দুর্নীতিবাজদের সহজেই সনাক্তের জন্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনেকটা এমন যে, ‘কে কতো টাকা আয় করেন, কিভাবে করেন-সরকারকে তা জানতে হবে। একজন ব্যক্তির কয়টা বা কতো টাকা দামের গাড়ি আছে, কয়টা বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, কতো জমি আছে, তাদের সন্তানরা কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেন, এসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার ব্যয় কতো, একজন ব্যক্তি কতটা ভোগবিলাসি জীবনযাপন করেন-এসব লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, সে দুর্নীতি বা অবৈধ আয়ে চলে কিনা!’