
মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল কক্সবাজার
কক্সবাজার সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এবং চকরিয়া উপজেলা চত্তর থেকে ১০কিলোমিটার দক্ষিণে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটির অবস্থান।এই সাফারি পার্কে প্রতিনিয়ত অযত্ন,অবজ্ঞা আর অবহেলার কারণে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। হাতি, বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অকাল মৃত্যু এখানকার নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি কুমির, হরিণ মারা যাওয়ার ঘটনা তার স্পষ্ট প্রমাণ। স্থানীয় সংবাদকর্মীর মুঠোফোনে বেড়াতে আসা পর্যটকের মাধ্যমে জানতে পারেন, পার্কের ভেতর দুটি হরিণ মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।গনমাধ্যম কর্মীদের হাতে পৌঁছেছে এমন ছবি ও তথ্য।
এবিষয়ে পার্কে দায়িত্বরতদের দায়ী করছে এলাকাবাসী।প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে পার্কে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগন। সে জন্য গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত কাউকে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়না। গত কয়েকদিন ধরে খুব কড়াকড়ি চলছে। এমনকি দর্শণার্থীদের টিকিট বিক্রিতেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মূলতঃ নিজেদের অপরাধ যাতে বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষে কর্তৃপক্ষের-এমন আচরন স্থানীয়দের অভিমত।
এদিকে উক্ত খবর পেয়ে চকরিয়ায় কর্মরত এক গনমাধ্যম কর্মী পার্কে ঢুকতে চাইলে বাধা দেয় দ্বায়িত্বরত গেইটম্যান। পার্কে ঢুকতে ‘উপরের নিষেধ আছে’ জানিয়ে সংবাদকর্মীকে কর্তব্যে বাধা প্রদান করা হয়।কি কারণে, কার নির্দেশে ভেতরে ঢুকা যাবেনা? জানতে চাইলে গেইটম্যান মো. ইব্রাহীম প্রতিউত্তরে বলেন, দেয়, সাংবাদিক প্রবেশে মাজহার স্যারের (বিট কর্মকর্তা)নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। “ওনি এখন খুব কড়া!” বিশেষকরে পার্কের আশপাশে বসবাসরত গনমাধ্যম কর্মীদের উপর পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশ বেশ কড়াকড়ি।কারণ ইতিপূর্বে পার্কের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া বেশকিছু গোপনতত্ত্ব প্রকাশ পায় স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীর হাত ধরে। সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধের বিষয়ে কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে বারবার কল পড়লেও ওপার থেকে কোন সাড়া শব্দ মেলেনি। অবশেষে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী দর্শণার্থী সেজে টিকেট কাউন্টার থেকে নির্ধারিত মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করে পার্কে প্রবেশ করে বিদ্যমান দৃশ্যের স্বচিত্র ক্যামেরায় ধারণ করেন।পার্কে প্রবেশ করে পর্যটকের দেওয়া সংবাদের সত্যতার দেখা মিলে। দেখতে পান একটি শিশু হরিণ লেকের পানিতে মরে ভাসছে। তার পাশে একটি মাদার হরিণ বেষ্টনির সাথে গেঁথে আছে। বাতাসে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরা হরিণটি অন্তত ৩/৪দিন আগের হতে পারে বলে দর্শণার্থীদের ধারণা।
স্থানীয়সুত্রে জানা গেছে, গত দুই-তিন দিন পূর্বে আরো দুটি হরিণ ও একটি কুমির মারা যায়। পার্ক কর্তৃপক্ষ গোপনে মৃতদেহগুলো মাটি পোতে ফেলেন। সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে হরিণগুলো মারা পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বিগত কয়েক বছরে রেকর্ড সংখ্যক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। তবু কার্যকর পদক্ষেপ নেই পার্ক নিয়ন্ত্রকদের। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, পার্কের বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত। যারফলে তার কাছে পার্কটি গুরুত্বহীন বল্লেও চলে।চোরের সাথে হাত মিলিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে পার্কের হরিণ শিকার করা হয়। ইতিপূর্বে হরিণের মাংস ও অস্ত্রসহ চোর আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বরংচ দফারফায় টাকার বিনিময়ে আতাত হয়ে চোরদের গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়।ইতিপূর্বে এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও তৎকালীন ডিএফও গোলাম মওলা তার অপরাধের ধামাচাপা দেন বলেও জানা যায়।শুরুতে দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমান পার্ক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট নয় আগত দর্শকরা। নতুন কোন আকর্ষণ নেই, বরং যা আছে তারও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পার্কের পশুপাখি সঠিকভাবে তদারকি করা হয়না। আগত দর্শণার্থীদের সাথেও পূর্বেরমত সৌজন্যমূলক আচরণ করেনা সংস্লিষ্ট কর্মরতরা। গাফেলতি রয়েছে পার্ক ইজারাদাতাদের।নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে কোন ঘটনা ঘটলে ইজারাদার ও পার্ক কতৃপক্ষ একে অপরের প্রতি দোষ চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।
উপরোক্ত বিষয়ে জানতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বরত ডিএফও আবু নাছের মোঃ ইয়াসিন নেওয়াজকে মুঠোফোনে বিষয়টি অবহিত হলে তিনি ঘটনাটি যত দ্রুত সম্ভব একটি তদন্ত টিম গঠনের মটধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।