নাঙ্গলকোটে তিন সহদরের দাদন বা সুদি কারবারের যাঁতাকলে সর্বস্বান্ত শত শত পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

লাঙ্গলকোট উপজেলার পেরিয়া ইউপির
তিন সহদরের (বাচ্চু মিয়া মেম্বার, মিজান মিয়া ও আমান উল্লাহ) দাদন বা সুদি কারবারির যাঁতাকলের সর্বস্বান্ত শত শত পরিবার। তাদের এই দাদন বা সুদি ব্যবসা নির্মহ ও পাকাপোক্ত করতে ইতিমধ্যে দুই ভাই বাচ্চু মিয়া ও আমান উল্লাহ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। সরেজমিন ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।৷ • ১. কাকৈরতলার আবুল বশর বুশ সুদি বাচ্চু থেকে সুদে টাকা নিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪ বিঘা জমি বিক্রি করে এখন সর্বস্বান্ত। এক সময়ের গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবার ছিল আবুল বশরের অথচ তার একমাত্র ছেলে এখন ড্রাইভিং করে জীবন চালায়।২. কাকৈরতলা মুন্সিবসড়ির সাইফুল ইসলাম শারীরিক নির্যাতনের শিকার, সামাজিক তুচ্ছ বিষয়ের জেরে বাজারে আটকিয়ে নির্যাতন করা হয়। ৩. কাকৈরতলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য খন্দকার আবুল হোসেনকে কাকৈরতলা বাজারে সারাদিন আটক করে রাখে , পরে পুলিশের সহযোগিতায় ছাড়া পায়। পরে এব্যাপারে সালিশ হলে দেখা যায়, আবুল হোসেন বাচ্চু মিয়ার কাছ থেকে কোনো টাকাই নেননি। আবুল হোসেনের অপরাধ ছিল, তাদের অপকর্মের বিরোধিতা করা। যারাই তাদের অপকর্মের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তাদেরই এই ভাবে হেনস্থা শিকার হতে হয়। ৪. তিন ভাইয়ের এই ধরনের সেচ্ছাচারি কর্মকাণ্ডের ফলে প্রায় ৬০ বছরের প্রতিষ্ঠিত কাকৈরতলা বাজারের ঐতিহাসিক ঈদগাঁ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কাকৈরতলা, বড়সাঙ্গীশ্বর, কাদবা, কলমিয়া, নোয়াপাড়া- এই ৫ গ্রামের মানুষ একসাথে এক ঈদগাঁয় নামাজ পড়তেন। আজ ৫ গ্রামের মানুষ ৫টি জামাতসহ তাদের গ্রাম কাকৈরতলায় দু-তিনটি জামাত হয়।৫. কাকৈরতলার ওহাব মিয়া, সুদের টাকা না দিতে পারায় টিনের ঘর খুলে নেয় সুদি মেম্বার বাচ্চু মিয়া। ৬. একই গ্রামের নুরু পাগলার স্ত্রীর জমি লিখে নেয় বাচ্চু মিয়া নিজের নামে।৭. মৃত আবদুল হালেমের জমাকৃত ১ লাখ মেরে দেয় বাচ্চু মিয়া। মৃত হেবু মিয়ার স্ত্রীকে সুদের টাকার জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বাচ্চু।
মাস্টার কামাল হোসেনের দরবারে নাজেল করে হালের বলদ নিয়ে যায় বাচ্চু সুদি। ৮. বড়সাঙ্গীশ্বরের আবুল কালাম মজুমদারের গরু নিয়ে আসে সুদি বাচ্চু মিয়া, সুদের টাকা দিতে না পারায়। ৮. মিজান কলমিয়ার মাওলানা সিহাবের কাছে জমা রাখা ৫ লাখ টাকা, পরে সুদসহ আদায় করে প্রভাব খাটিয়ে । ৯. কাদবার রিকশার চালাক মৃত আবদুল মালেক সুদের টাকার জন্য বসত ভিটা লিখে নেয় বাচ্চু মিয়া। ১০. বড়সাঙ্গীশ্বরের মোয়াজ্জেম হোসেনের সুদের টাকার জন্য জমি লিখে নেয় বাচ্চু মিয়া।১১. কাকৈরতলার মাহবুবুল হক ড্রাইভারকে বাজারে আটকে রেখে মারধর করে বাচ্চু মিয়া।১২. কাকৈরতলার ওমর ফারুকের কাকৈরতলা বাজারের একটি দোকান লিখে নেয় বাচ্চু মিয়া।
এছাড়াও শত শত ঘটনা এলাকাবাসীর মুখেমুখে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, তিন ভাইয়ের ঘর তল্লাশি করলে তাদের কাছে থাকা সাধারণ মানুষের ব্ল্যাক স্টাম্প ও ব্ল্যাক চেক পাওয়া যাবে। ২০১৫ সালে কাকৈরতলার ইদু মিয়ার ছেলে শাহিন (১৪) হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়, সেই হত্যাকাণ্ডের সাথেও তিন ভাইয়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে গ্রামের লোকজনের মুখেমুখে।
প্রভাবশালী হওয়ায় গবির ইদু মিয়া আজও ছেলে হত্যার বিচারের জন্য ধারে ধারে ঘুরছেন।
মূল সন্দেহভাজন আসামি ওয়ার্কসপ মিজানের কাছ থেকে মোটা অঙ্গের টাকা খেয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ জনগণের মুখেমুখেবাচ্চু মেম্বার প্রতিবেদককে বলেন: যে ব্যক্তি আপনাদের নিকট অভিযোগ করেছেন তাকে আমার সামনে নিয়ে আসুন। আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই। মিজান মিয়া বলেন: আমাদের সম্মান নষ্ট করতে যে সকল ব্যক্তি আপনাদের নিকট অভিযোগ করেছে তাদের নাম বলুন। সরোজমিনে এসে আপনার খোঁজ-খবর নিতে পারেন আমাদের সম্পর্কে। কেউ আমাদের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলতে পারবে না। আমান উল্লাহ বলেন: কিছুদিন আগে থানায় ও আমাদের নামে অভিযোগ করেছে কিন্তু কেউ কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। এসকল ভিত্তিহীন কথা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না।সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মো: পারভেজ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যক্তি দাদন বা সুদি কারবার করা বাংলাদেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি গ্রাম আদালতের মাধ্যমে স্থানীয় চেয়ারম্যান এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এসব বিষয়ে প্রখ্যাত আইনজীবী এডভোকেট বদিউল আলম সুজন বলেন, ব্ল্যাক স্টাম্প ও ব্ল্যাক চেক নেয়া আমলযোগ্য অপরাধ, আইনের আশ্রয় নিতে পারেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাক্তি। কোনো কারণে চেক বা স্টাম্প সম্পাদন করতে হলে অবশ্যই লিখিত হতে হবে। এব্যাপারে স্থানীয় পেরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, সুদ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ আর রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া এজাতীয় ব্যবসা করতে পারেন না।
আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়, যে সকল ব্যক্তি এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। লাঙ্গলকোট থানা ওসি আবদুর নুর বলেন, সমাজের এই ক্যান্সার নির্মূলে কেউ থানায় অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি লাঙ্গলকোট সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল সাদেক হোসেন ভুঁইয়া বলেন, সুদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ডুকে গেছে সুদের কারবার, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের কঠিন প্রদক্ষেপ কামনা করি। এটা আমাদের ধর্মের সাথেও সাংঘর্ষিক, বন্ধ হলে আল্লাহ কাছ থেকেও রক্ষা

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত