সংবাদপত্র যেন সত্য বলায় ভয় না পায় : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সংবাদপত্র যেন সত্য বলায় ভয় না পায় : শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রধান অতিথি হিসেবে গতকাল রাজধানীর বিএমএ অডিটরিয়ামে দৈনিক ঐশী বাংলা পত্রিকার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসবে এবং গুণিজন সংবর্ধনা যারা পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সুস্থ সাংবাদিকতার চর্চায় পাঠক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ চায়। পত্রিকা গুলোর সংবাদ পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য এবং আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে এবং অসুস্থ জার্নালিজমকে সুস্থ ও সুন্দর করতে হবে। তিনি বলেন , ১৯৭১ সালের চেতনা নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সেই স্বপ্নের সুন্দর লাগাম এখনো এ সমাজে আমরা পেলাম না। স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। গণতন্ত্রে সেই সাম্যের আকাঙ্ক্ষা ধেয়ে বেড়াচ্ছে , যতই তাকে ধেয়ে বেড়াচ্ছি ততই সে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে সমাজ, টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র দর্শন, রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছি আমরা মানুষ হিসেবে, দেশ হিসেবে। ৭১ পরবর্তী একটার পর একটা আন্দোলন আমাদের না পাওয়া আকাঙ্ক্ষা, কষ্ট আমাদের ২৪ এর দার গোঁড়ায় নিয়ে এলো। তিনি বলেন, ২৪ গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশের তরুণ বাচ্চারা আমাদের বড়দেরকে তিরস্কার করল এবং বলে দিল তোমরা এতোদিন মিথ্যাচার করেছো, তোমরা দুর্নীতি করেছ এবং আমাদের হক তোমরা কেড়ে নিয়েছো। আমাদের একটা ন্যায্যতার জায়গায় দাঁড়াতে দাওনি। সেই ক্ষোভে ফেটে পড়লো তরুণ সমাজ। তিনি বলেন, ২৪ শুধু হাসিনা সরকারকে তাড়িয়ে দেয়নি, ৫০ বছরের আবর্জনা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছে এবং আমরা বড়রা এই বাচ্চাদের অভিভাবকরা সবচেয়ে বড় অপরাধী। সেদিন যখন ওরা বলেছিল কোটা নয়, মেধা। মেধা ভিত্তিক সমাজ আমরা গড়িনি। আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আমরা অপসংস্কৃতির দেশ চালিয়েছি। উপদেষ্টা বলেন,এই বাচ্চারা মেধার কথা বলে আমাদের নতুন করে চিন্তার জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের সুযোগ দিয়েছে নতুন করে দেশকে নিয়ে ভাববার। তিনি বলেন, দেশটাকে আর টুকরো টুকরো করবেন না। আমাদের ঐক্যের প্রয়োজন, আমাদের ভালোবাসার প্রয়োজন। ভালোবাসার রাজনীতির প্রয়োজন। এই বাচ্চারা যে রক্ত দিয়ে গেছে আমরা যদি তাদের প্রতি সৎ হই তাহলে এবার আমরা নতুন করে দেশ গড়তে ঘুরে দাঁড়াবো। উপদেষ্টা বলেন, ঐশী বাংলা পত্রিকা যেন সত্যের জায়গায় দাঁড়ায়। ইতিহাসে, সংস্কৃতিতে সত্য বলার ভয় যেন না পায়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইয়োলো জার্নালিস্ট বলে একটি অসুস্থতা আছে, আমি চাইবো ঐশী বাংলা যেন সেটাকে তিরস্কার করে, বর্জন করে এবং ইয়োলো জার্নালিজমের যেন জন্ম না দেয়। তিনি আরো বলেন, দেশ একটি ক্রান্তিলগ্ন দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন মুখী আমরা হচ্ছি, সকলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, এখানে আমর একটি আবেদন আছে আপনাদের কাছে নির্বাচন ততটুকুই ভালো হবে, ততটুকু সুন্দর হবে, ততটুকুই শান্তিপূর্ণ হবে, যতটুকু আপনারা হতে দেবেন, রাজনৈতিক দলগুলো হতে দেবে। যতই অন্তবর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা থাকুক না কেন, সরকারের একার পক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কঠিন হয়ে যাবে এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে প্রেম দ্বারা। ঘৃণা, ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় । আমার অন্তরে যদি প্রেম থাকে, সেই প্রসারিত জায়গা যদি আমি তৈরি করতে পারি তাহলে তো আমি সমাজটাকে প্রসারিত করতে পারবো। তিনি বলেন, আমার সব সময় মনে হয়েছে আজকের দিনের ডাক ঐক্যের, আজকের দিনের ভাব অন্তরের, মুক্তির, আজকের দিনের ভাব হাতে হাত মিলিয়ে এ দেশকে নতুন করে গড়ার, সেটার একমাত্র দর্শন আমার কাছে সহমর্মিতার, ভালোবাসার। আমরা এমন একটা সমাজ চাই যে সমাজে থাকবেনা দুর্নীতি। যারা পরবর্তী নির্বাচনে সরকারে আসবেন আমরা তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করব । মনে রাখতে হবে আমরা এসেছিলাম এক বছরের জন্য, নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী রাজনৈতিক দল যারা আসবে তারা হয়তোবা পাঁচ বছরের জন্য কিন্তু সেটাও ক্ষণিক অর্থাৎ ছাড়তে হবে দায়িত্ব, যেন মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদা নিয়ে দ্বিতীয় দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।দৈনিক ঐশী বাংলার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দৈনিক ঐশী বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক সুফি এ আর এম মুহিউদ্দিন খান ফারুকীর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে সাবেক ধর্ম ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ-মজহার, ড. মাওলানা আনিসুর রহমান জাফরী, ড. এস এম শাহনূর বক্তৃতা করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে দৈনিক নিরপেক্ষ পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক ও নজরুল গবেষক মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, দৈনিক অগ্রসর পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা হোসেন চৌধুরী, দৈনিক বাংলার ডাক পত্রিকার সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, সুফি সাধক, সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট গুণীজন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে “পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:)-এর তাৎপর্য, গুরুত্ব ও শিক্ষা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ-এর মহাসচিব এবং পীর সাহেব, নূরে হক দরবার শরীফ অধ্যক্ষ আল্লামা হানিফ নুরী। সভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা গুণী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে গুণিজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্ হলেন: সাংবাদিকতা,সমাজসেবা,মানবাধিকার নিয়ে কাজ করায় সকল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন। সাংবাদিক নেতা এ এফ এম রাসেল পাটোয়ারী তাই সমাজ কল্যাণ মন্ত্রানালয় এর উপদেষ্টা তার কাজের প্রশাংশা করেন। বায়োফার্মার এমডি, ডা. লকিয়ত উল্ল্যা, বকশিবাজার খানেকার পীর শাহ্ সাঈদ আনওয়ার আল মোবারকী, অধ্যক্ষ আল্লামা হানিফ নুরী, ড.নজরুল ইসলাম মারুফ আল মাদানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, নাজমুল হাসান, শাহসুফি সামসুজ্জামান চৌধুরী সজীব প্রমূখ।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত