
খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্হান,শিক্ষা,স্বাস্হ্য এই পাঁচটি মোলিক চাহিদার মধ্যে মানুষের প্রধান ও অন্যতম মোলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। মানুষের জীবন ধারনের জন্য খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও
পুষ্টিকর খাদ্য।এক কথায় ভেজালমুক্ত খাদ্য,সুস্হ জীবন।
আমরা জানি,যে খাদ্য ক্ষতিকর নয় যা দেহের ক্ষয়রোধ ও বৃদ্ধি সাধন করে বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ করে এক কথায় তা হচ্ছে স্বাস্হ্য সম্মত খাদ্য। অন্যদিকে যে খাবার বা খাদ্য মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর এক কথায় তা হচ্ছে ভেজাল খাদ্য।আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু যেন
ভেজালের আবরনে ঢাকা।জীবন রক্ষাকারী ঔষধ,কোমলমতি শিশুদের খাদ্য ও আজ ভেজালে সয়লাব।অধিক মুনাফার লোভে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এইসব কর্মকান্ডে জড়িত। বর্তমানে খাদ্যে ভেজালের মাএা এত বেশী যার ফলে এইদেশে বাস করা অনিরাপদ হয়ে উটছে।একই কথা সম্প্রতি বাংলাদেশের উচ্চতর আদালত বলেছে। এইক্ষেএে যে বা যারা এইসব কর্মকান্ডে জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদন্ড সচেতন মহলে সে দাবি উঠেছে।
আমরা যে সব খাবার খাই এবং যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত তারা বাড়তি উৎপাদন ও মুনাফা
করতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে তাতে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তবে গুনগত মান নষ্ট
হয়েছে প্রান বৈচিএ হারিয়ে গেছে।জনস্বাস্হ্য ইন্সটিটিউশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি যে ৬৩৬০ পন্যের সংগৃহীত নমুনার মধ্যে
৩১.১০ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। গবেষক পাভেল পার্থ বলেন উৎপাদনকারীকে অধিক ফলনে যেন বাধ্য করা হচ্ছে কীটনাশক ব্যবহারে ফলে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেএে সমস্যা
তৈরী করছে। অন্য দিকে উৎস স্হান,পরিবহন ও গুদামজাত করনে খাদ্যে রাসায়নিক মিশ্রন তথা ভেজাল মেশানো হচ্ছে। পোল্টি শিল্পে খাবার হিসাবে যা ব্যবহার হয় মুলত বিষাক্ত পরবর্তীতে তাদের বর্জ্য মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার হয় ফলে অন্যদের কে আমরা অনিরাপদ করে তুলছি। বর্তমানে পরিবেশ যে ভাবে দুষিত হচ্ছে সেই খাদ্য অনিরাপদ ও ভেজালে সয়লাভ
হচ্ছে।প্রকৃত বাজার ব্যবস্হা নজরদারি করলে ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত সম্ভব নয়।
আমরা জানি বিক্রয় বা বানিজ্যিক উদ্দশ্য ব্যতীত পন্যের মুল্য পরিশোধ বা বাকিতে পন্য বা সেবা যারা ক্রয় করে তারা ভোক্তা।একজন ভোক্তার জাতিসংঘ স্বীকৃত ৮ টি অধিকার
রয়েছে।যেমন- মোলিক চাহিদা,তথ্য,নিরাপদ খাদ্য,পছন্দ,জানা,অভিযোগ
প্রতিকার,ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান,সুস্হ পরিবেশ। অন্যদিকে এই সবের
উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন করা,নিরাপদ খাদ্য বা সেবা নিশ্চিত করা। সেবা বা পন্য
ক্রয়ে প্রতারনা রোধ করা। অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে গনসচেতনতা সৃষ্টি করা। যা বাস্তবায়নে বানিজ্য মন্ত্রনালযের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও প্রত্যেক
জেলার জেলা ম্যাজিস্টেট বা ক্ষমতা প্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্টেটগন পালন করেন।
৬ই এপ্রিল ২০০৯ বাংলাদেশ সরকার ভোক্তা সংরক্ষন আইন প্রনয়ন করেন। এতে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশান বাংলাদেশে ভেজাল প্রতিরোধে
অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে।জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশানের কোন সদস্য বা কোন ভোক্তা তার পুনাঙ্গ তথ্য সহ কারন উদ্ভব হওয়ার এিশ দিনের মধ্যে যে কোন পন্যের উৎপাদন কারী,সরবরাহকারী,পাইকারী,
খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে জাতীয়
ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক রবাবরে লিখিত
অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমানিত ও জরিমানা করা হলে
আদায়কৃত জরিমানার ২৫% অভিযোগ কারী বা ভোক্তাকে প্রদান করা হবে মর্মে আইন প্রনীত হয়। একজন ভোক্তা বা অভিযোগকারী নিম্মলিখিত ব্যতয় হলে অভিযোগ করতে পারবেন। যদি….
♦ পন্যের মোড়ক ব্যবহার না করা (১ বছর কারাদন্ড,৫০০০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড)
♦মুল্য তালিকা প্রদর্শন না করা(১ বছর কারাদন্ড বা ৫০,০০০ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড)
♦ধার্যকৃত মুল্যের অধিক মুল্যে পন্য বিক্রয় (১ বছর কারাদন্ড বা ৫০,০০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড)
♦ ভেজাল পন্য বা ঔষধ বিক্রয় (৩ বছর কারাদন্ড বা ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড)
♦ওজনে /পরিমাপে কারচুপি /বাটখারা পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি ( ১ বছর কারাদন্ড বা ৫০০০০ হাজার টাকা বা উভয় দন্ড)
মেয়াদ উত্তীর্ন পন্য বা ঔষধ (১ বছর কারাদন্ড বা৫০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড)
♦পন্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন ( ৩ বছর কারাদন্ড ২ লক্ষ টাকা বা উভয় দন্ড)
♦খাদ্য দ্রব্যে নিষিদ্ব দ্রব্যের মিশ্রন ( ৩ বছর কারাদন্ড বা ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড)
♦মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারনা (১ বছর কারাদন্ড বা ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড)
তাহাছাড়া আদালত মনে করলে দন্ডের অতিরিক্ত সংশ্লিষ্ট অবৈধ পন্য বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। একই অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তি পুনরায় একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুন করার বিধান রয়েছে।
এই দিকে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশান দেশের আপামর জনসাধারনকে ভেজালের অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। বর্তমানে সংস্হাটি সাধারন মানুষের বা ভোক্তাদের
অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়িরা ভেজাল খাদ্যের যে রাজত্ব বিস্তার করছে যার ফলে সাধারন
মানুষের জীবনে নানাবিধ রোগ তথা ক্যান্সারের আশন্কা বাড়ছে।ভেজাল বর্তমানে বাংলাদেশে আতন্ক কারন এমন কোন পন্য বা খাদ্য নেই যা ভেজাল বা রাসায়নিক মুক্ত। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের থাবা
থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশানের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। এই দেশের সকল নাগরিককে সচেতন হতে হবে। সকলের সুস্বাস্হ্য রক্ষায় ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করা জরুরী।
আমরা মধ্যম আয়ের দেশে সত্যিকার অর্থে উপনীত হতে হলে ও খাদ্যে নিরাপত্তা সহ সকলকে ভেজাল মুক্তে সোচ্চার হতে হবে ও জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরী। আসুন ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করি ভেজাল ও খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে দেশকে মুক্ত করি।
লেখক……
মোঃ কামরুল ইসলাম
কবি, লেখক, সংগঠক
সভাপতি
এশিয়ান মানবাধিকার মিশন
ও
জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশান- চট্টগ্রাম।