চৌধুরী মুহাম্মদ রিপন
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে সরকার। রাজধানীর নামি-দামি হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এজন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসাসেবা প্রদান নীতিমালা’ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এটি কার্যকর হলে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, পাঁচ কোটি টাকার বেশি সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ২৫ শতাংশ মওকুফ পাবেন। দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ৫০ শতাংশ মওকুফ পাবেন। এ ছাড়া আয়করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত নন এমন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে শতভাগ ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হবে। অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা এ চিকিৎসাসেবা পাবেন। চিকিৎসাসেবা বলতে সব ধরনের ডাক্তারিসেবা, শৈল্য চিকিৎসা, ওষুধ ক্রয় ও সরবরাহ, বাডি ভাড়া, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ এবং সেবিকার সেবা চিকিৎসাসেবার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে মেডিকেল অ্যাটেনডেন্টের বাডি ভাড়া, খাদ্য ও পানীয়সহ অন্যান্য ব্যয়, অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য যানবাহন কিংবা পরিবহন সেবা প্রদান করলে তার অর্থ তাকে পরিশোধ করতে হবে। পাঁচ বছর যে এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে স্থান থেকে ভাতা তুলেছেন ওই ঠিকানায় প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হবে। জরুরি চিকিৎসাসেবা একজন মুক্তিযোদ্ধা যে কোনো স্থান থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। নীতিমালা অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তি নিজ উপজেলাতে চিকিৎসাসেবা নেবেন।
উপজেলায় চিকিৎসাসেবায় সীমাবদ্ধতা থাকলে রোগের বিবরণসহ রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। একইভাবে জেলা সদর থেকে শুরু করে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণসহ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এ সুবিধা পাবেন না। একটি হাসপাতালে একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা ৬০ দিন চিকিৎসা নিতে পারবেন। জানা গেছে, রাজধানী থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতালের ব্যয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ থেকে পরিশোধ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার কাছে টাকা থাকুক কিংবা না থাকুক তাকে অবশ্যই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারা চিকিৎসা পাবেন। এ ছাড়া রাজধানীতে ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন। বিশেষায়িত যেসব হাসপাতালে তারা চিকিৎসাসেবা পাবেন সেগুলো হল- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিওরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যেসব হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্ধারণ করবে ওই সব প্রতিষ্ঠান।।