ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা।

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)।তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন মানবতার কল্যানে।
প্রতি বছর চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে ১২ ই রবি উল্ আওয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)যে ভাবে পালন করা হয় তা কতটা ইসলাম বিধি সম্মত তা আমাদের ভাবা উচিত।বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জসনে জুলুস- ঈদে মিলাদুন্নবী নামে যা করা হয় তা অনেকের মতে ইসলাম বিরোধী।কারন এই ধরনের কার্যক্রমের কারনে যে যানজট হয় তাতে অসুস্হ সংকটাপন্ন রোগীকে হাসপাতালে নিতে রোগীর আত্মীয় স্বজনকে অনেক কষ্ট পেতে হয় এমনকি হাসপাতালে দেরীতে যাওযার কারনে ঐ রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে। ইসলাম বিদেশী মেহমানকে সম্মান করতে শিক্ষা দেয় তবে অতিরিক্ত হৈ,চৈ এমনকি কাউকে উদ্দশ্যে করে জিন্দা নবীর আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম এই ধরনের শ্লোগান সরাসরি আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করা যা অবশ্যই নিন্দনীয়।নামাজের আজান শুনা সত্বেও মসজিদে প্রবেশ না করা ও নামাজ আদায় না করা জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় দাড়িয়ে মানুষের অসুবিদা সৃষ্টি করে একজনকে লক্ষ্য করে বিতর্কিত জয়গান,ভীড় ইসলামের মুল আদর্শের পরিপন্হী। আমরা কোন মুসলমান এর বিপক্ষে নয়।তবে আনন্দ উদযাপনের পদ্বতি ভিন্ন হওয়া উচিত তার পক্ষে। মহানবী (সঃ)এর পৃথিবীতে আগমনের যে উদ্দেশ্য এবং মানব কল্যানে তাঁর যে ভুমিকা ও মুসলমানদের জন্য ভবিষৎ দিক নির্দেশনা তা বিদায় হজ্জ্বের ভাষনে তিনি দিয়েছেন তার সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তাও বিবেচনা করা উচিত।তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন- এক সাহাবীর প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন সোমবার আমার জম্মদিন আর সোমবার আমার মৃত্যু হবে তাই প্রতি সোমবার আমি রোজা রাখি।আসলে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম আভিধানিক অর্থ হল খুশী,আনন্দ করা ইত্যাদি আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনকে বুঝায়।বর্বরতায় ভরপুর আরবের বুকে মানবতার কল্যানে শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের ন্যায়ের
পথে পুরো বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন।তাই খুশিতে এই আয়োজন। আরবের মরুভুমিতে ১ হাজার ৪৯৯ বছর আগে মা আমেনার কোল জুড়ে তিনি এসেছিলেন অন্ধকার পৃথিবীতে আলো জ্বালিয়ে দিতে।নামাজ কায়েম করতে গিয়ে তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন।ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে যুদ্ধে অনেক সাহাবীকে তিনি হারিয়েছেন।নবী করিম ( সঃ)এর সময় এমনকি তাঁর ওফাতের শত হাজার বছর পরে এই ধরনের আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ।আমরা আনন্দ অবশ্যই করব তবে তা যেন হয় ইসলাম বিধি সম্মত। প্রথমত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এরপর মা বাবার কবর সহ আত্মীয় স্বজনের কবর
জেয়ারত,দান,গরীবের মাঝে খাবার বিতরন,গরীবদের স্বচ্ছল করতে বিভিন্ন গঠন মুলক উদ্দ্যেগ,কোরান তেলওয়াত,দোয়া মাহফিল,নবীর আদর্শ,কর্মজীবন অনুসরন করে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করা। তা না করে ইসলামে যা বিদাত বা নতুন
সংযোজন তা ইসলামের মুল আদর্শ হতে ইসলামকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে।নবীর আগমন খুশি মনে পালন করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব – মিলাদুন্নবীর সুচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন | পবিত্র কোরআন মজিদের ৩য় পারা সুরা আল এমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে মধ্যে আল্লাহ বলেন ( ৮১ ) ” হে প্রিয় রাসুল ! আপনি স্মরণ করূন ঐ দিনের কথা,যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নেয় এ কথার উপর যে ,যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো ; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবুয়্যাত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন ,তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে ” আল্লাহ বলেন : ” তোমরা কি এ সব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছো ( তখন ) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, আমরা অঙ্গিকার করছি | আল্লাহ বলেন : “তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষি থাক | আর আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম “|–( ৮২ ) ” অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে- সেই নাফরমান ” (কাফের ) | |পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আল ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন- তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেওয়া হয়েছে তার জিকির কর এবং আনন্দ কর। আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন,—হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ | এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর চেয়ে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম | আল্লাহর এই নেয়ামত ও অনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা করার নির্দেশ স্বয়ং রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন যার প্রমান উপরোক্ত পবিত্র কোরআনের আয়াত | অতএব নবীজির শুভাগমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কি হতে পারে ? আবার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে নবীজির শ্রেষ্টত্ব প্রকাশ করার জন্য ঘোষণা করেন,-নিশ্চয় আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি |
তাছাড়া সুরা আজহাবের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন , “তোমরা আমার হাবিবের প্রতি দুরুদ সালাম প্রেরণ কর” | আল্লাহ আমাদেরকে স্পষ্ট এখানে নির্দেশ করেছেন উনার হাবিবের প্রতি দুরুদ সালাম জানানোর জন্য | আল্লাহর নির্দেশ বিবেচনায় যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ফরজ অর্থাৎ নবীজিকে তাজিম করা , সম্মান করা , নবীজিকে নিয়ে ভালো মনোভাব পোষণ করা | অতএব পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের উক্ত আয়াতগুলো থেকে সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে যায় ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশি মনে পালন করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানী দায়িত্ব তবে নামাজ,রোজা কবর জেয়ারত,দোয়া মাহফিল, দরুদ পাঠ,আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত অন্য ভাবে নয়।

মোঃ কামরুল ইসলাম,
লেখক- মানবাধিকার কর্মী,প্রাবন্ধিক ও কবি।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত