ফরিদ বাবুল, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। এতে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। আওয়ামীলীগ থেকে ক্লিন ইমেজের একঝাঁক সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী নতুন মুখ মাঠে চষে বেড়াচ্ছে।
ঈদ পরবর্তী সাধারণ মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এসব নেতারা। এছাড়াও হাট-বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজেদের পোষ্টার, ব্যানার, পেষ্টুন, বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। সমান ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও।
তবে এই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে এখনো দেখা যাচ্ছে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কোন নেতাকে। অথচ উখিয়া-টেকনাফ আসনে জামায়াত-বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে।
এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুই বারের নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনিও পুনরায় দল থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাঁকে নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত।
এদিকে আওয়ামী ঘরানার নতুন মুখদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সরকারের বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের ছোট ভাই, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, বাংলাদেশ তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহাম্মদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ঝাঁপ দেখা গেলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। যার ফলে বিএনপি ঘরাণার নেতাকর্মীদের মাঝে কোন টেনশন নেই। তবে তাদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন প্রচার-প্রচারণা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
অপরদিকে মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টিও এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও উখিয়া উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। এছাড়াও টেকনাফ থেকে জাতীয় পার্টির আরেক নেতা মাষ্টার এম.এ মঞ্জুর নিজেদের শক্তিশালী প্রার্থী দাবী করে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাধনা দাশ গুপ্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নির্দেশে আমি মাঠে কাজ করছি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি জীবনের শেষ বয়সে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করব।
আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল নতুন মুখদেরকে স্বাগত জানাই। কারণ রাজনীতি করার ও মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। আওয়ামীলীগে হাজারো ফুল ফুটবে, জননেত্রী শেখ হাসিনা সেখান থেকে একটি ফুল বেছে নেবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয় তাঁর জন্য দলের সকল নেতাকর্মীরা সু-সংগঠিত হয়ে কাজ করবে। দলে কোন ধরণের কোন্দল বা গ্রুপিং নেই।
আওয়ামী লীগ থেকে মাঠ সরগরম করে রাখা অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, সারাদেশে মাদক নিয়ে কক্সবাজারের দূর্নাম রয়েছে। মনোনয়ন পেলে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে উখিয়া-টেকনাফকে মাদকমুক্ত করব।
এদিকে গত ২৫ আগষ্ট জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু কক্সবাজার এসে মহাজোটের নেতা হিসেবে উখিয়া-টেকনাফ থেকে জাতীয় পার্টি মনোনয়নের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সিগন্যাল দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, এ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। বিগত ১৫ বছর ধরে উখিয়া-টেকনাফ নির্বাচনী আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছি। জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়নি কখনো। আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আদর্শে রাজনীতি করে আসছি। দেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও নীতি-নৈতিকতার আদলে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে অবিচল ছিলাম।
প্রভাবশালী এই নেতা আরো বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করব। উখিয়া-টেকনাফের মানুষ দল, মত নির্বিশেষে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে ইনশাল্লাহ।