
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আদিকাল থেকে সভ্যতার সিঁড়ি বেয়ে মানুষ তার প্রয়োজনে সামাজিক ভাবে জীবন যাপনের লক্ষ্যে কিছু নিয়ম নীতি শৃংখলাবোধ আইন প্রথা মেনে চলে।যদিও জনগনের কল্যান মুলত আইনের উদ্দেশ্য তবুও সব সময় সর্বক্ষেএে আইন ন্যায় বিচার ও নীতির উপর অটল থাকে না।জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আইনের দৃষ্টিতে সমান এই কথাটি সকলে বললেও মূলতঃ তা পুরোপুরি সঠিক নহে। যদিও আইন কোন ব্যক্তি বা বিশেষ মোকদ্দমার জন্য প্রণীত হয় না তবুও গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্হায় আইনের শাসন ও মানবাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ন।মানুষ নিজকে সভ্য করার চেষ্ঠা করছিল সেই আদি কাল থেকে যা এখনও নিরন্তর। আদিকালে মানুষের ভাষাজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ছিল না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সে যুগের মানুষকে বর্বর বা অসভ্য ভাবা হলে ও তারা বর্তমানে এক শ্রেনীর মানুষের মত অমানবিক ছিল না।বুয়েট ছাত্র অাবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড তাই প্রমান করে। পৃথিবীতে যুগে যুগে নবী রাসুল প্রেরনের মুল উদ্দেশ্য ছিল অসভ্য বর্বর মানুষকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে মানবিক হতে শিক্ষা দেয়া।
বাংলাদেশ সহ যে কোন দেশের উন্নয়ন কখনও টেকশই হতে পারে না যদি সে দেশের মানুষ সভ্য ও মানবিক না হয়।কোন দেশে যদি মানবতা মানবাধিকার গুম,খুন,জুলুমএকক আধিপত্য, বিরোধী মতবাদকে উপেক্ষা করা হয় তখন ঐ দেশের গনতন্ত্রান্তিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়।যা কখনও কাম্য নয়। মানবাধিকার বলতে এমন কিছু অধিকারের সমষ্টিকে বুঝায় যা একজন মানুষ সমাজে বসবাস করলে স্বাভাবিক ভাবে সে যা লাভ করে সে অধিকার যা অ-হস্তান্তর যোগ্য,অক্ষয়, ও অন্তনির্হিত থাকে।বিভিন্ন গবেষনায় মানবাধিকারের যে তত্ত্বসমুহ দেখা যায় তম্মধ্যে প্রকৃতিবাদী মতবাদ,প্রত্যক্ষবাদী মতবাদ ঐতিহাসিক মতবাদ,ও সমাজতাত্তিক মতবাদ মুলত গুরুত্বপূর্ন। যদিও সমাজতাত্তিক মতবাদের মূল উপজীব্য মানুষ তাই এই মতবাদ অনুযায়ী আইন প্রনয়নের পদ্বতি হচ্ছে সমাজকে নতুন ভাবে নির্মান করা।সমাজকে বিনির্মানে প্রতিটি জাতি গোষ্ঠির ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের যে রূপ বর্তমানে রয়েছে তা পাশ্চাত্য সভ্যতারই ফল। অন্যদিকে বিশ্বের কিছু ধনী রাষ্টের নিছক স্বার্থের কারনে আজ বিশ্ব মানবতা হুমকির মুখে পড়েছে।বর্তমান বিশ্বে মানবতা একটি নিছক একটি ভন্ডামিতে পরিনত হয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের পর জাতিসংঘ সর্ব প্রথম মানবাধিকারের সার্বজনীন মানদন্ড প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে ১৯৪৮-১৯৬৬ সালে গৃহীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনা (UDHR),নাগরিক রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত অান্তর্জাতিক সনদ ( ICCPR) অর্থনৈতিক সামাজিক সংস্কৃতি অধিকার সংক্রান্ত সনদ (ICESCR ) যা জাতিসংঘেরই অবদান।জাতিসংঘের ঘোষনা অনুযায়ী ও মানবাধিকার বাস্তবায়নে মানুষের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তা আজ উপেক্ষিত। যেমন- আইনের দৃষ্টিতে সমতা,সংগঠনের স্বাধীনতা,চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা,ধর্মীয় স্বাধীনতা,প্রতিকার পাওয়ার স্বাধীনতা ইত্যাদি।অন্যদিকে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আদালতের নিকট আশ্রয় গ্রহন করতে পারবে যে দেশের আদালত ক্ষমতাসীনদের আধিপত্যের বেড়াজালে বন্দি থাকে সে দেশের মানুষ যে কত অসহায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মানবতা যদি কখনও হুমকির মুখে পড়ে ঐ মূর্হুতে উন্নয়ন হলে তা দীর্ঘস্হায়ী হয় না বরং সমাজ ও রাষ্টের নৈতিক অবক্ষয় হয়।সমাজ কুলুষিত হয়, ধ্বংস হয় রাষ্ট ,নীরবে কাঁদে মানবতা।বর্তমানে মানবতা, মানব সভ্যতা ও মানবাধিকার এই তিনটি আলোচিত বিষয় হলে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা আমাদের দেশে অবমূল্যায়িত হচ্ছে। সমাজ রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জতিক ভাবে মুখে যতটা মানবতার কথা বলা হয় বাস্তবে এর কোন মিল নেই।মানবতা প্রকৃতভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বার্থের বলয়ে নিষ্পেসিত হচ্ছে।মানবতা হচ্ছে সেই মানবিক গুনাবলী যার পরশে পরশে জাগ্রত মানবিক চেতনা ধারন করে স্বার্থের বলয় থেকে বেরিয়ে জন মানুষের কল্যানে ভুমিকা রাখা। যে কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে সমাজ সভ্যতা অাধুনিক মুল্যবোধ নতুন ভাবে গড়ে উঠে, মূলত সেটিই ধারন করাই মানবতা বা মানব সভ্যতা।
মানবাধিকার বলতে একজন মানুষের তথ্যের অধিকার,ভোটাধিকার,স্বাধীন মত প্রকাশ,বেঁচে থাকার অধিকার, এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত মৌলিক অধিকারকে বুঝায়। বেচে থাকার জন্য সব মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সহ যাবতীয় অধিকার সহজে ভোগ করার নিশ্চয়তাই এক কথায় মানবাধিকার।বর্তমানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা,ক্ষমতা দখল,ভোটাধিকার হরন, ক্ষমতার অপব্যবহার, সীমান্তে হত্যাকান্ড, বিশ্ব বিদ্যালয় সহ সর্বত্র দখলের রাজনীতি,হত্যার বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি,সাংবাদিক হত্যাকান্ড, রাজপথে হত্যা ও লাশের উপর নৃত্য, সর্বত্র ধর্ষণ,অর্থ, সুদ, ঘুষ, দুুর্নীতি মানবতা বর্জিত কর্মকান্ড প্রতিটি দেশের জন্য মানবতার জন্য এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
লেখক-মোঃ কামরুল ইসলাম।
কবি ও সভাপতি এশিয়ান মানবাধিকার মিশন চট্টগ্রাম জেলা।