বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পূর্র্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। ১৯৯৭ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দশকের বেশি সময় ধরে পাহাড়ে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন-সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ২২ বছরপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙামাটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার আধার। যুগযুগ ধরে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল জীবনাচার, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এ অঞ্চলকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যম-িত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রেখে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’পার্বত্য এলাকায় ভূমিবিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছেÑ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বোর্ডের কার্যক্রম আরও গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চট্টাগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ প্রণয়ন করেছে। পার্বত্যাঞ্চলের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, সেসব এলাকায় ১০ হাজার ৮৯০টি পরিবারের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।’
রাঙামাটিতেও দিনটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিংয়ের নেতৃত্বে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা।
পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানেও এদিন নানা কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে। এরইমধ্যে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণের স্থান খাগড়াছড়িতে তিন দিনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকাল সোয়া ৮টায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ২২টি বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ওই দিনের আনুষ্ঠানিকতা। সাড়ে ৮টায় রয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি। পরে টাউনহল চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এর পর রয়েছে বর্ণিল ডিসপ্লে। সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি টাউনহল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে ‘শান্তিচুক্তি একটি ঐতিহাসিক অর্জন‘ শীর্ষক আলোচনাসভা।