আজকের কর্ণফুলী ডেস্কঃ
গণতন্ত্রের মানসপুত্র ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (বৃহস্পতিবার) ৫ ডিসেম্বর। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী আমৃত্যু আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের বিকাশসহ ও এতদঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে অবদান রেখে গেছেন জাতি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তাঁর জীবন ও কর্ম আগামী প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’ খবর বাসস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশে সারাজীবন কাজ করেছেন। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এবং মানুষের কল্যাণ সাধনে এ মহান নেতার জীবন ও আদর্শ আমাদের সর্বদা অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের মেহনতি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন একজন উদার ও প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’প্রসঙ্গত, ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তিনি ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দীর কনিষ্ঠ সন্তান। জাহিদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা হাইকোর্টের একজন খ্যাতনামা বিচারক ছিলেন। কলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯১৩ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া সেখানে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বিসিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে গ্রেস ইন হতে বার এট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক সংগঠক। নানা শ্রেণিপেশার মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। সেই সাথে তিনি ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের সংগঠিত করতে ১৯২৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি, ১৯৩৭ সালে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি গঠন করেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি মুসলিম লীগ সরকারের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে সোচ্চার করেছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি, তাই সুধী সমাজ কর্তৃক ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ বলে আখ্যায়িত হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল নেতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ফল যুক্তফ্রন্টের অবিস্মরণীয় বিজয়। যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
কেবল একজন রাজনৈতিক নেতাই নন, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কও। তার প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। বরেণ্য এই নেতা ১৯৬৩ সালের এই দিনে (৫ ডিসেম্বর ) লেবাননের বৈরুতে একটি হোটেল কক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকার হাইকোর্টের পাশে তিন নেতার মাজারে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধি রয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় হাইকোর্ট সংলগ্ন মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার নেতৃত্বের অসাধারণ বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও গুণাবলি জাতিকে সঠিক পথের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। বিবৃতিতে তিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
