ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে আলাদা বার্তায় এ শোক জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এর আগে রাত ৮ টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় বলেন, ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন। দেশের উন্নয়নে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ড থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করেন। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনেও তিনি কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, তার মতো মানবতাবাদি মানুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। জানা গেছে, আগামী রোববার সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তার মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে বারোটায় আর্মি স্টেডিয়ামেই নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। প্রসঙ্গত, স্যার ফজলে হাসান আবেদ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে, ১৯৭২ সালে তদানীন্তন সিলেট জেলায় একটি ক্ষুদ্র ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৪৭ বছরে বহুবিস্তৃত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক বিশ্বের অন্যতম কার্যকরী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। মাইক্রোফাইন্যান্স, সামাজিক ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে বহুমাত্রিক বিনিয়োগ সমন্বয়ে ব্র্যাক আজ বিশ্বের বুকে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬২ সালে কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হন। পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানিতে সিনিয়র কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের মোড় সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ এবং ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার পর ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তার বয়স ৬৫ হয়ে গেলে তিনি নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হিসেবে কর্মরত ছিলেন আরও ১৮ বছর। কয়েক মাস আগে সে পদটিও ছেড়ে দিয়ে অবসরে যান এই গুণী ব্যক্তি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় স্যার ফজলে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পুরস্কার ‘ইদান প্রাইজ’ (২০১৯), প্রাক-শৈশব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন’র লেগো পুরস্কার (২০১৮), দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (২০১৫), ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট (২০১৪), লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডাল অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), শিক্ষাক্ষেত্রে ওয়াইজ প্রাইজ ফর এডুকেশন (২০১১), ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ইউএনডিপি মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (২০০৪), ওলফ পামে প্রাইজ (২০০১) এবং র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফর কমিউনিটি লিডারশিপ (১৯৮০)। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকা স্যার ফজলেকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি এর মর্যাদাসূচক গ্লোবাল অ্যাকাডেমি ফর সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিশন অন হেলথ রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট (১৯৮৭-৯০), ইন্ডিপেনডেন্ট সাউথ এশিয়ান কমিশন অন পভার্টি অ্যালিভিয়েশন (১৯৯১-৯২) এবং হাইলেভেল কমিশন অন লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওর (২০০৫-২০০৮)-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্যার ফজলে ২০১০ সালে ব্রিটেনের রানি প্রদত্ত নাইটহুড মর্যাদা লাভ করেন। ২০১০ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শদাতা দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনে স্যার ফজলে বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বের অন্যতম হিসেবে উল্লেখিত হন। স্যার ফজলে ২০১৯ নেদারল্যান্ডের রাজার নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত