
ফরিদ বাবুল, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদ টেকনাফ উপজেলায় হ্নীলার মেধাবী মুখ আব্দুল্লাহ আল -নোমান বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের একজন সহকারী জজ হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। সেই নিয়োগে আলোকিত করেছেন ঘুনে ধরা টেকনাফকে।আইন বিষয়ে আরো উচ্চতর ডিগ্রী লাভের ইচ্ছা তাঁর। বিচারিক কাজে সফলতার জন্য তিনি সকলের দোয়া চেয়েছেন। ছোট বেলা থেকে আইনের শাসন আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার এক স্বপ্নবাজ তরুণের নাম আবদুল্লাহ আল নোমান। অদম্য আস্থা, অধ্যবসায় এবং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় তাকে পৌঁছে দিয়েছে কাংখিত লক্ষ্যে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের গত ১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে ১০.০৩.০০০০.০০৩.৩১.০০২.১৮-২৫নং স্মরকের সুপারিশের প্রেক্ষিতে মনোনীত প্রার্থীগণকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত মেধাক্রম অনুসারে জৈষ্ঠ্যতা অক্ষুন্ন রেখে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে দেশব্যাপী ৯৭জন সহকারি জজ নিয়োগ প্রদান করা হয়। এতেই টেকনাফের হ্নীলার মেধাবী মুখ আব্দুল্লাহ আল নোমান সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহকারী জজ পদে নিয়োগ পেয়ে টেকনাফবাসীকে গর্বিত করে তুললেন। জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা পূর্ব সিকদার পাড়ার অবসর প্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী মরহুম ফরিদুল আলম এবং মোস্তফা বেগম দম্পতির ২য় সন্তান আব্দুল্লাহ আল নোমান । তিনি হ্নীলা আল-ফালাহ একাডেমি থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করেন। বাবা-মায়ের গভীর পর্যবেক্ষণ এবং পরিচর্যায় ছোট বেলা হতে সে মেধাবী ছিল। তিনি ৪র্থ শ্রেণী হতে গুহাফা বৃত্তি, প্রাইমারী স্কলারশিপ, ৭ম শ্রেণি গুহাফা বৃত্তি, সেকেন্ডারি স্কলারশিপ, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ২য় স্থান, কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৯ সালে এসএসসিতে বোর্ড স্কলারশিপসহ জিপিএ-৫, ২০১২ সালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫, ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগে অধ্যায়নে ভর্তি এবং একই বছর আইন অধ্যায়নের জন্যে ঢাবি ত্যাগ করে ১০০% স্কলারশিপে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে ভর্তি হন।
উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর Human Rights Summer School-2016, International Student Exchange program-2017 সহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ২০২০ সালে ১২শ বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা (জুডিশিয়াল ক্যাডার) হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে আয়োজিত জজ নিয়োগ পরীক্ষায় টেকনাফ থেকে এটাই প্রথম নিয়োগ এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি মরহুম এডভোকেট জাফর আলমের ভাগিনা তিনি। তাঁর বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল্-মামুন বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর বর্তমানে রবি কোম্পানীর প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে মাদক ও মানব পাচার নিয়ে সীমান্ত জনপদ টেকনাফের ভাবমূর্তি ভূলুন্ঠিত হলেও আব্দুল্লাহ আল নোমানদের মতো অনেক সাফল্যে ভরা গোবরে পদ্মফুলেরা আড়ালে রয়ে যাচ্ছে। টেকনাফের কৃতি সন্তান আব্দুল্লাহ আল নোমান সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় টেকনাফের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী মহল, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন তাঁকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শিক্ষা জীবন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে কর্মজীবনের প্রথম পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল অর্জিত হওয়ায় তার পরিবারে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তবে আজ এ ফলাফলের খবরের মাঝে তাঁর বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে উৎসবের আমেজ আরো দ্বিগুন হত।
ভাল ফলাফলের জন্য আবদুল্লাহ আল নোমান সমস্ত শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত এবং নিয়মিত পাঠদান এবং শিক্ষকদের নিবিড় তত্বাবধান তার অগ্রগতির সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।