ধর্মীয় সহিংসতা এবং উপমহাদেশের রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

দিল্লীতে ভয়ংকর কিছু ঘটনা ঘটছে! একের পর এক ক্ষতবিক্ষত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের কেউ গুলিবিদ্ধ, আবার কারো মাথা থেঁতলে গেছে হাতুড়ির আঘাতে। ঘর-বাড়ি, দোকান পাট জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে! শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা কেউ বাদ যায়নি মৃত্যুর মিছিল থেকে! নয়াদিল্লীতে আসলে কি ঘটছে, একদিকে মানুষ মরছে অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি সাহেব ট্রাম্প আর তার স্ত্রীর সেবায় মগ্ন থেকেছেন। তিনদিন পরে এসে একটা টুইট করে দায়িত্ব সেরেছেন! এটাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার নমুনা। ৩৯ জনের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে শুধুমাত্র ধর্মের কারনে!আজ পাঁচদিন ধরে দিল্লী থেকে একের পর এক হৃদয়বিদারক যেসব সহিংসতার খবর আসছিল, বিপরীত দিক হতে তেমনি শোনা যাচ্ছিল মুসলমান প্রতিবেশীর জীবন বাঁচাতে হিন্দু প্রতিবেশীর জীবন বাজি রাখার গল্পগুলো। দিল্লীর পুর্ব দক্ষিণ শহরে প্রেমকান্ত নামক এক দিল্লীওয়ালা নিজ শরীরে সত্তর ভাগ আগুনে পুড়েও বাঁচিয়েছে প্রতিবেশী ছয়জন মুসলমানের জীবন।আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে প্রেমকান্তকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সারারাত কারন অ্যাম্বুলেন্স আসার মতো পরিস্থিতি তখন দিল্লীতে ছিল না। আহা, মানবতা!সহিংসতা শুরুর সাথে সাথে শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘গুরুদুয়ার’ তার ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিল সকল মুসলমানদের জন্য। হঠাৎ শুরু হয়ে যাওয়া সহিংসতা হতে স্কুল ফেরত ছাত্র ছাত্রীদের বাঁচাতে যমুনা বিহারের এলাকাবাসী হাতে হাত রেখে মানবচেইন তৈরি করে দাড়িয়ে ছিল। নিরাপদে অনত্র এলাকায় শিক্ষার্থীরা সরে না যাওয়া পর্যন্ত তারা মানব ব্যূহ তৈরি করে দাঁড়িয়েছিল। শিলামপুর এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিচুজাত বলে পরিচিত দলিত সম্প্রদায় লোকজন দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে মুসলমান প্রতিবেশীদের বাঁচাতে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছিল।দিল্লীর রমেশ পার্ক এরিয়ায়, হিন্দু ও শিখ যুবকরা সারারাত মুসলমানদের ঘর পাহারা দিয়েছে, ললিতা পার্কেও দেখা গেছে হিন্দু পরিবার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মুসলিম পরিবারকে নিজেদের ঘরে দুইদিন লুকিয়ে রেখেছে। এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে, এ ঘটনাগুলোয় কি ধর্ম নেই? নাকি আপনারা খুঁজে পান না!আহত অনেকের চোখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে। অন্ধ হয়ে গেছেন অনেকেই। কারো পুরো মুখমণ্ডল ঝলসে গেছে।অনেকেরই মাথায় গুরুতর চোট। আহতদের অন্তত ৪৬ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত মিলেছে। আপনাকে কোনো পশু মারতে আসবে না। জলপাই রঙের গাড়িতে করে কেউ এসে মারবে না। কিংবা রাষ্ট্রীয় বুলেট এসে আপনাকে বিদ্ধ করে দিয়ে যাবে না। আপনাকে মারবে সাধারণেরা। আপনার মত মানুষেরা যাদের সাথে বসে দুদিন আগেও একসাথে আলুপুরি খেয়েছেন। সেসব মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় গরম ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আগুন বানিয়ে দেয়া হবে। সেই আগুনে তারা একই রক্ত মাংসের, পাশের বাড়ির মানুষদের পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।মানুষ কত ভয়াবহ! রাষ্ট্র কত ভয়ংকর। ধর্ম কত বড় কার্ড! কতভাবে প্লে করা যায় এটা নিয়ে। আপনি গেরুয়া পরে আসেন কিংবা পাজামা পাঞ্জাবির জুব্বা! একদলকে পুড়িয়ে উড়িয়ে দিতে চান আপনার পতাকা। মানুষ হয়ে আপনি মারছেন মানুষকে। কোনো অপরাধ, কোন ভুল, কোন পাপ ছাড়া। আহত মানুষগুলোর দিকে তাকানো যায় না। মৃত্যু সবসময় ভয়ংকর। এভাবে নিষ্পাপের মত মরাটা আরও ভয়ংকর। মরার সময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে এই পৃথিবীকে আপনি শুধু বুঝিয়ে যেতে পারলেন না, “মানুষ কত অবুঝ”। পৃথিবী হয়ত একসময় বদলাবে। কিন্তু এই উপমহাদেশ বদলাবে না।এখানকার ধর্ম ব্যবসায়ীরা বদলাবে না। সাধারণ মানুষের মাথা বদলাবে না। গত ৭৩ বছরেও বদলায়নি কিছু।দিল্লিতে কপিল মিশ্র বা অনুরাগ ঠাকুরের মতো কট্টরপন্থী নেতারা তো শুধু সরকারের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করেছে। যুগে যুগে মানুষকে বিভক্ত করার জন্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ধর্ম, দিল্লিতেও আরও এইবার সেই মারণাস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে ধর্মান্ধের দল। মসজিদ ভাঙচুর হয়েছে, মিনারে চড়ানো হয়েছে হিন্দুত্বের প্রতীক গেরুয়া পতাকা, পোড়ানো হয়েছে কোরআন শরীফ।মুসলমানদের বাড়িঘরে হামলা চালাচ্ছে তারাও, অভিযোগ এসেছে লোকজনকে আটকে রেখে প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হবারও। বিজেপি এখন আদর্শিক ফ্যানাটিকদের উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে লেলিয়ে দিচ্ছে মোদী-অমিত শাহদের মত লোকজন!দিল্লিতে হত্যাকান্ডের রক্তের দাগ লেগে আছে মোদির হাতে— তাকে যারাই বুকে টেনে নিচ্ছেন, ট্রাম্পের মতো যারা তাকে জড়িয়ে ধরছেন/ আগামীতে ধরবেন তাদেরকেও এই হত্যার দায় নিতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, এই লড়াই কেবল ভারতের নাগরিকদের নয়— এর ভবিষ্যতের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের স্বার্থ জড়িত।ভারতে হিন্দুত্ববাদী মোদীর উত্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশের ওপরে ভারতের আচরণের প্রভাব পড়েছে, পড়ছে এবং পড়তে থাকবে। কোথায় বিবেকানন্দ, কোথায় মহাত্মা গান্ধী— ভারতের সব জায়গাতেই এখন ফ্যানাটিক তৈরির কারিগর মোদি-অমিত শাহ রা বিরাজ করছে!

 

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত