
ডেস্ক রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেশ চিন্তিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হলেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত আগামী ৮ মার্চ প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষ দিন। আর আগে সব ধরণের হিসাব-নিকাশ করতে হবে দলটির। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী ৫ মার্চ বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম একটি সমন্বয় সভাimageকরা করা হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্য যারা প্রার্থী হয়েছেন (বিদ্রোহী) তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কেউ অমান্য করে অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তারা। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় প্রার্থীদেও বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বর্তমানে মেয়র পদে একক প্রার্থী দিলেও কাউন্সিলর পদে সক্রিয় বিদ্রোহীরা। তবে গত সময়ে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের শাস্তি না হওয়ায় এবারও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে কিছু হবে না, এমনটা কোনো প্রার্থীর মনে করার সুযোগ এবার কোনো ভাবেই রাখতে চায় না ক্ষমতাসীন দলটি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মহানগর কমিটি নেতারা বিদ্রোহীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও নগরের নির্দেশনার কথা জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে তাদের। তাদের বলা হয়েছে-দলসমর্থিত এসব প্রার্থীদের বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে, দল ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। এ অবস্থায় কেউ সরে না গেলে সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম একটি সমন্বয় সভা করা হবে। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী রাখতে। একাধিক প্রার্থী যেখানে ছিল, তাদের আমরা বসানোর চেষ্টা করছি। শেষ পর্যন্তও যারা দলসমর্থিত প্রার্থীদের বিপক্ষে মাঠে থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পরের বিষয়। তখন দেখা যাবে। আপাতত আমরা এখন প্রার্থী নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এদিকে আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয়ভাবে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও চট্টগ্রামে সিটিতে ৫৫ টি ওয়ার্ডে শত শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে অনন্ত ১৫ জন আছেন বর্তমান কাউন্সিলর। অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় সমর্থন পুনর্বিবেচনা ও কাউন্সিলর প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবার অনেক প্রার্থীদেও বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা যায়, এখন অনেকে জন দলীয় সমর্থনবঞ্চিত নেতা সমর্থন পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন। ১৪ নাম্বার লালখান বাজার ওয়ার্ডে আবুল হাসনাত মো. বেলাল আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলদারিত্বের অভিযোগ তুলেছেন ওয়ার্ডেরই একাধিক নেতা। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দলের কোনো পদে না থেকেও শুধু মিথ্যার ওপর ভর করে বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের কাউন্সিলর মনোনয়ন। কৌশলি আবুল হাসনাত মো. বেলালের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তার পরিবর্তে ওয়ার্ড আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবিও জানান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুকে।প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৯ মার্চ। এবারই প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ তারিখ ১ মার্চ। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মার্চ। এছাড়া ৯ মার্চ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।