প্রেস বিজ্ঞপ্তি,
করোনা মোকাবেলায় কর্মীদের রক্ষা করা বীমা কোম্পানীর জন্য বড় চ্যালেন্জ,অভিমত বিকেএসবির সভাপতির, ৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ।
বীমা কোম্পানী গুলির উচিত এই করোনা মাহামারীতে তাদের মাঠ কর্মীদের রক্ষা করা,কর্মীরা বেঁচে থাকলে বেচে থাকবে কোম্পানী গুলি।
বর্তমান বৈশ্বিক করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলে এরাই পারবে করোনা যুদ্ধ মোকাবিলার পর প্রত্যেক কোম্পানীর অর্থনৈতিক চাকা পুনরায় ঘুরিয়ে দিতে ।
এ জন্যই কোম্পানী গুলির প্রয়োজন এই দু:সময়ে বীমা পেশাজীবিদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখা।
একটি কথা জেনে রাখা ভালো দেশের বর্তমান বীমা শিল্পের প্রেক্ষপটে ৯৫ শতাংশ পলিসি হোল্ডার নুতন পলিসি সংগ্রহ করে একজন বীমা কর্মীর মাধ্যমে,কিংবা পলিসি হোল্ডার পলিসি নবায়ন করে বীমা কর্মীর মাধ্যমে।
বীমা কর্মীরা যদি পুরনো পলিসি হোল্ডারদের উদ্বুদ্ধ না করেন সে ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ পলিসি হোল্ডার পলিসিটি নবায়ন করতে আগ্রহ দেখায় না,
ফলে প্রতি বছর এমনিতেই কয়েক লাখ পলিসি তামাদী হয়ে যায়।
অনেক পুরনো জরিপে দেখা যায় তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের অনেক কোম্পানীর ২য় বর্ষ নবায়ন
প্রিমিয়াম আদায়ের হার ৫% হতে ৩০% যাহা একটি কোম্পানীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্বির জন্য এমনিতেই বড় চ্যালেঞ্জ।
তারপর করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশ যে পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
দেশের বেশীর ভাগ পলিসি হোল্ডার প্রান্তিক কৃষক ও দিন মজুর এই করোনা মোকাবেলায় সবাই আজ বিপযস্থ,অনেক মানুষ কর্মহীন,খাদ্যহীন,এই কঠিন অর্থনীতিক মন্দায় তারা আজ অর্থনৈতিক ভাবে শুন্য হয়ে পড়েছে,এখন অনেক পলিসি হোল্ডার চাইবে তাদের পূর্বের জমানো টাকা কোম্পানী হতে তুলে ফেলতে,
এমন অবস্থায় নবায়ন প্রিমিয়াম জমা দেওয়া কিংবা নতুন করে পলিসি করা তাদের জন্য কঠিন হবে।
এই কঠিন দু:সময়ে বীমা কোম্পানী গুলি তাদের কর্মী বাহিনীকে অর্থ সহায়তা দিয়ে ধরে রাখতে না পারলে,নবায়ন প্রিমিয়াম আদায় যেমন কমে যাবে,তেমনি ধস নামবে নতুন ব্যবসাতেও।
কোম্পানী গুলি তখন নিয়মিত ব্যয় মিটাতে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে,বিভিন্ন ফিক্সড ক্যাপিটাল ভেঙ্গে রেগুলার খরচ বহন করা শুরু করবে।অনেক কোম্পানী এখনই ব্যাংক ঋনের উপর নির্ভর হয়ে আছে।
আর্থিক দুরবস্থার কারনে ১০ টি কোম্পানীকে তাদের সম্পদ বিক্রির নির্দেশনা অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে নিয়ন্ত্রন সংস্থা (IDRA)।
অনেকগুলি কোম্পানী দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারনে এক দিকে প্রতি বছর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে মুলধন শেষ করে ফেলতেছে অন্য দিকে কোম্পানী গুলির আর্থিক ঝুঁকি ও বেড়ে যাচ্ছে।
ইতিপূর্বে অর্থ মন্ত্রনালয় হতে কয়েক কোম্পানীকে লাইসেন্স বাতিলের চাপ দেওয়া সহ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা থাকলেও তারা আর্থিক অনটনে শেয়ার বাজারের তালিকা ভূক্ত হতে পারছে না।
আবার তৃতীয় প্রজন্মের অনেক কোম্পানি মুলধন ঘাটতির কারনে বীমা পলিসি হোল্ডারদের চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন দাবী মিটাতে পারছে না।
ফলে বীমা পলিসির মেয়াদ ২/৩ বছর আগে শেষ হলেও পলিসি হোল্ডার গন তার মেয়াদ উত্তীর্ন টাকা ফেরত পাচ্ছে না।অনেক পলিসি হোল্ডার পাওনা আদায়ে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন আদালতের দারস্ত হচ্ছেন,অনেকেই আবার IDRA অভিযোগ করেছেন।
এই সব অব্যবস্থাপনা ও নেতিবাচক পরিস্থিতির প্রভাবে দেশের বীমা শিল্পের অবস্থান এমনিতেই চরম তলানীতে রয়েছে ।
যারফলে একজন বীমা কর্মীর মাঠ থেকে একটি নুতন পলিসি সংগ্রহ করা যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি এই মন্দা পরিস্থিতিতে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করাতো রীতিমতা বড় চ্যালেন্জ হয়ে দাড়িয়েছে।এই অচল অবস্থা পুরো বছর জুড়েই চলতে পারে।
এরূপ জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বীমা কর্মীদের নেই প্রশিক্ষন,নেই চাকুরী নিশ্চয়তা,নেই বেতন কাঠামো,নেই গ্রাচ্যুইটি,নেই স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা,নেই বোনাস,নেই পেনশন সুবিধা,নেই তার মৃত্যুতে পারিবারিক আর্থিক নিশ্চয়তা ,তাদের নেই উচ্চতর প্রশিক্ষনের কোন ব্যবস্থা।
এক কথায় বীমা পেশাজীবিদের ভবিষ্যত বলে কিছুই নেই ।এভাবে সঠিক মুল্যায়ন ,সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক চাহিদা মিটাতে না পেরে গত ১০ বছরে দলে দলে বহু বীমা কর্মী-কর্মকর্তা পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে গেছে।
সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবীরা বেকার থাকলেও বীমাকে পেশা হিসাবে গ্রহনে আগ্রহী নন।নতুন কর্মী তৈরী করাও কঠিন কাজ।
এভাবে চলতে থাকলে করোনা পরবর্তী সময়ে এই শিল্পের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে,ফলে অনেক কোম্পানী বন্ধের উপক্রম হতে পারে।পেশা ছেড়ে চলে যেতে পারে আরো কয়েক লাখ বীমা কর্মী। বেকার হওয়ার আশংকা কয়েক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
তাই কোম্পানী গুলির উচিত এই করোনা মোকাবেলায় দু:সময়ে বীমা পেশাজীবিদের পাশে থাকা,যাহা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীমা শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহনের ফলে যখন বীমা শিল্প কিছুটা আলোর মুখ দেখা শুরু করেছিল ঠিক তখনই শুরু হলো মহামারি করোনা ভাইরাস।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোম্পানী গুলির উচিত, বীমা পেশাজীবিদের সংগঠন,বীমা কল্যান সোসাইটি বাংলাদেশ,
(বিকেএসবি)র সভাপতির ৭ দফা দাবী প্রস্তাব বিবেচনা করা:-
দাবী: ১) কোন শর্ত ছাড়াই কর্মী-কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন আটকে থাকা যাবতীয় নবায়ন কমিশন বিল দ্রত পরিশোধ করা।
২) কোন শর্ত ছাড়াই কর্মী-কর্মকর্তাদের আটকে থাকা ১ম বর্ষ কমিশন বিল/আর্নিং দ্রত পরিশোধ করা
৩) যে সকল কর্মকর্তা (বিসি হতে উদ্ধর্তন)শর্ত সাপেক্ষে বেতনে কাজ করেন তাদের আগামী ৩/৬ মাস লক্ষমাত্রার শর্ত শীতিল করে বেতন চালিয়ে যাওয়া।
৪) মহামারী করোনা মোকাবেলায় বাছাইকৃত কর্মীদের আগামী ৩/৬ মাস পরিবার চালানোর জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান করা,যা মন্দা পরবর্তীতে সমন্বয় করা।
৫) প্রত্যেক কোম্পানীর সন্মানিত পরিচালক গনের আর্থিক সহায়তায় একটি “করোনা মোকাবিলা তহবিল” গঠন করে দেশব্যাপী অসচ্ছল কর্মীদের তালিকা তৈরী করে জোন অফিস বা সার্ভিসিং সেলের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা।
৬) ড্রাইভার,পিয়ন অফিস ষ্টাফদের বেতন ভাতা আটকে না রেখে দ্রত পরিশোধ করা এবং মহামারী করোনা অযুহাতে এই দু: সময়ে কাউকে চাকুরীচ্যুত না করা।
৭) প্রত্যেক কোম্পানী করোনা মোকাবেলায়, সরকারী আর্থিক প্রনোদনার জন্য (এমডি ফোরাম),মালিক এসোসিয়েসন (বিআইএ),বীমা প্রতিনিধি সংগঠন (বিকেএসবি) এবং বীমা নিয়ন্ত্রন অথরিটি (আইডিআরএ)সহ সংশিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি জরুরী যৌথ সভা করে বীমা শিল্পকে রক্ষায় ও বীমা পেশাজীবিদের আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে অর্থ-মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রনোদনার প্রাপ্তির জন্য জোরালো দাবী করা।
অর্থাৎ ১০ লক্ষ বীমা কর্মী বাঁচলেই কেবল বীমা শিল্প বাচবে,এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
বর্তমান অবস্থায় বীমা কর্মীদের বাঁচানো জন্য সকল কোম্পানীর সন্মানিত চেয়ারম্যন ও সিইও মহোদয়গনের উচিৎ এই দু:সময়ে বীমা পেশাজীবিদের পাশে থেকে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা,তাদের খোঁজ খবর নেওয়া।
কোম্পানী গুলি পেশাজীবিদের এমন ভাবে সহায়তা দেওয়া উচিত যেন করোনা দূর্যোগ পরবর্তী বীমা শিল্পকে বাচানোর কাজে জীবন বাজী রেখে নিরলস পরিশ্রম করে কোম্পানির অর্থনৈতিক চাকা সচল করে দিতে পারে এই বীমা পেশাজীবিরাই...
এটাই আমার প্রত্যাশা এটাই আমার দাবী।
আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
বীমা কল্যান সোসাইটি(বিকেএসবি)
রেজি নং:-এস ১৩২৩৭/২০১৯