
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই প্রতিনিধি :
” এই সময় অনেক হৈ চৈ ছিলো, যারা বাহিরে অবস্থান করতো তারা সবাই বাড়িতে আসতো, আনন্দের একটা আমেজ ছিলো কিন্তু আজ তার কোনোটাই নেয়, বাহিরে থেকে কেউ আসেনি, পাড়ায় লকডাউন করে দিয়েছে, সবাই যে যার যার মত বাড়িতে অবস্থান করছে: ফুল বিষু উৎসব নিয়ে কথাগুলো এই প্রতিবেদককে বললেন রাংগামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা সাফছড়ির বাসিন্দা বেতার ও টিভি শিল্পি জ্যাকলিন তনচংগ্যা। এই ইউনিয়নের শিল্পি সূর্য্যসেন তনচংগ্যা ও সুমনা তনচংগ্যা প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই বিষু উৎসব উপলক্ষ্যে প্রতিটি পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের খেলাধুলা হতো, কিন্ত আজ মহামারি করোনায় সব আনন্দ যেন হরিষে বিষাদ হয়ে গেছে, আমরা সরকারি নির্দেশে এখন ঘরে বসে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষু উৎসব পালন করছি।
১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুন তালুকদার জানান, তাঁর এলাকায় প্রতিবছর এই উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দ র্যালী হতো। এতে তনচংগ্যা সম্প্রদায় ছাড়া সকল ধর্মের লোক অংশ নিতো। এছাড়া প্রতিটি পাড়ায় আলাদা আলাদা ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলা হতো, এই বছর করোনার কারনে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ঘরে বসে পালন করছি এই উৎসব।
প্রতিবছর বিষু উৎসব তনচংগ্যাদের নতুন স্বপ্ন দেখায়। তারা নিজেদের শত দুঃখ ভুলে গেংখুলী, উবাগীত, দুদুক, হেংগরং এর মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলতো পাহাড়ের প্রত্যেকটি জনপদ। গাবুরি গান করতো তার পাহাড়ি কন্ঠে।পাহাড়ের উচু নিচু পথ আনন্দে ভরে যেত চারিদিকে। একে অপরের হিংসা-ক্রোধ ভুলে সবাই বিষু উৎসবে মেতে ওঠতো।
ফুল বিষু দিনের তনচংগ্যা তরুণী-তরুণী সহ সকল বয়সীরা নদীতে ফুল ভাসাতো এবং তাদের জীবনে শান্তি কামনা করতো। মূল বিষু দিনের তনচংগ্যা তথা পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী তরকারি “পাচন” রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করা, চতুর্দিকে হৈ-চৈ করে আনন্দ করা এবং নতুন বছরে”গজ্জেপজ্জে দিনে বরণ করা হতো নতুন বছরকে। তনচংগ্যাদের ঘিলা খেলা,লাদেং খেলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব কিছু মিলে আনন্দে একাকার হয়ে যেতো এই পাহাড়ী জনপদ।
হয়োতো একদিন নতুন ভোর হবে, নতুন সূর্য্য উঠবে, কেটে যাবে এই অমানিশার ঘোর অন্ধকার: সেই প্রত্যাশা সকলের।