এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিকদের জীবনের মূল্য নেই? করোনা-ঝুঁকি বাড়িয়ে কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করায় বোয়ালখালী প্রেসক্লাবে এসে বিক্ষোভ করছেন এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

রিপন চৌধুরী সিনিয়র রিপোর্টার:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ প্রেক্ষিতে মানবিক প্রয়োজনে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া চট্টগ্রামের সব কারখানা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বোয়ালখালীতে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা এখনো সচল রাখা হয়েছে।

কারখানা চালু রাখতে প্লাস্টিক কারখানাটির শ্রমিকদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-যদি কেউ কাজ করতে না আসে তাহলে তাদেরকে ছাঁটাই করা হবে, দেয়া হবে না বকেয়া বেতনও! এতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রায় ৫শ’ শ্রমিক।

ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, প্লাস্টিক কারখানাটির কাছে শ্রমিকদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? আজ সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে কাজ ফেলে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের বেশকিছু শ্রমিক বোয়ালখালী প্রেসক্লাবে এসে আকুতি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে তাদের রক্ষায় প্রশাসন যেন কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে শ্রমিকদের বেতনসহ ছুটি দিতে আকুতি-মিনতি করে তারা।

তারা বলেন, কারখানা না গেলে আমাদের চাকরি চলে যাবে বলেছেন প্রোডাকশন ম্যানেজার কবির সাহেব। আমাদেরকে নাকি বেতনও দেবে না। আমাদের চাকরি যেন থাকে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন, দেশবাসীর কাছে আমরা হাতজোড় করে মিনতি করছি।

আরেকজন শ্রমিক বলেন, করোনাভাইরাস সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। বোয়ালখালীতে সব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একমাত্র এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কারখানাটি বন্ধ করা হয়নি। সরকার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে। আমরা এই সময়টা ঘরে থাকতে চাই।

আরেকজন শ্রমিক বলেন, আমরা খুব অসহায়। গরিবের ছেলে। পেটের দায়ে এখানে চাকরি করতে এসেছি। এই দুর্যোগে আমাদের পাশে প্রশাসন নেই। আরেকজন শ্রমিক বলেন, সারাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে এত সচেতনতা প্রশাসন সৃষ্টি করছে। করোনা নিয়ে আমরা যে কী বিপদের মধ্যে আছি সেটা কারখানার মধ্যে গেলে কারো বুঝার সুযোগ পর্যন্ত নেই। ঠাসাঠাসি করে এত শ্রমিক সেখানে। সবাইকে বন্দি করে রাখার মতো করে চাকরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা কী সম্ভব? আল্লাহ না করুন, কেউ যদি করোনাভাইরাস বহন করে তাহলে সবাই আক্রান্ত হয়ে যাবে। কারণ সামান্য জায়গায় সেখানে অনেক শ্রমিক।

এদিকে রপ্তানিমুখী কারখানায় ক্রয়াদেশ রয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে অপরিহার্য পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত ছাড়া সব ধরনের কারখানা বন্ধ রাখতে গত ২৬ মার্চ নির্দেশনা দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। তবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে তাদের রপ্তানি করার তথ্য নেই। তাছাড়া তারা যেসব প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে সেগুলোকে এই মুহূর্তে অপরিহার্য পণ্য হিসেবে ধরাও যায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল হক ম্যানেজার (প্রশাসন ও এইচআর) ওয়াদুদ স্বপনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এরপর যোগাযোগ করলে ওয়াদুদ স্বপন বলেন, শ্রমিকরা চাইলে আমরা কারখানা বন্ধ করে দেবো। কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার শ্রমিক কাজ করে কারখানায়। ভেতরে একটা রেস্ট হাউজ আছে তিনতলা। ক্যান্টিনে চারজন বাবুর্চি আছে। সেখানে সিনিয়র অপারেটর, অপারেটর ও হেলপার মিলে ৩০-৩৫ জন থাকে। এখন ৬০-৭০ জন নিয়ে জরুরি কাজে আমরা কয়েকটি মেশিন চালাচ্ছি। ব্র্যাককে কিছু পণ্য দিতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ডাস্টবিন দিতে হচ্ছে। স্যানিটাইজারের বোতল এগুলো দিতে হচ্ছে। পদ্মা ও যমুনা ও সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠানকে পণ্য সরবরাহ দিতে হচ্ছে। ইউএনও’র সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, আমরা বলেছি কারখানা বন্ধ রাখতে আমাদের আপত্তি নেই। তার দাবি, কারখানা বন্ধ রাখলে আলটিমেটলি রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, গতকাল মালিকপক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে তাদের কারখানার কাজে বহিরাগত কে বা কারা নাকি বাধা দিচ্ছে। এরপর সেখানে আমি পুলিশ পাঠিয়ে তাদের সহযোগিতাও করেছি।

ওসি বলেন, তবে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে শ্রমিক-সমাগম ঘটিয়ে কাজ করা মোটেও সমীচিন নয়, তিনি আরও বলেন আজ সকালে ইউএনও, এসি ল্যান্ড এবং যৌথবাহিনীর টিম এন মোহাম্মদের কারখানাটিতে গিয়েছেন বলে শুনেছি, নিশ্চয়ই তারা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বা দেবেন কারখানাটি আদৌ চালু রাখা প্রয়োজন কিনা।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত