ল’ড়াইটা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে শেখ হাসিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাসেল চৌধুরীঃ

করো’না পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশে একাই ল’ড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ল’ড়াইয়ে তিনি জিতবেন কিনা তার উপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অস্তিত্ব-ভবিষ্যত।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ল’ড়াইটা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য। অবশ্য শেখ হাসিনার জন্য ল’ড়াই করাটা নতুন বিষয় নয়।

প্রতিকূল পরিস্থিতিকে জয় করেই তাকে এই জায়গায় আসতে হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতা থেকে সরকার প্রধান, সরকার প্রধান থেকে রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতায় তিনি যেভাবে উদ্ভাসিত হয়েছেন, তা কোনটাই খুব সহ’জ প্রক্রিয়ায় অর্জিত নয়।

কঠিন সংগ্রাম এবং ল’ড়াইয়ের মাধ্যমেই তাকে এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার ল’ড়াইটা একটু ভিন্ন। এজন্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই ল’ড়াইটা একটু কঠিনও বটে।

এবারের ল’ড়াইটা একটু কঠিন এই কারণে যে, করো’না কেবল জনস্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, এটি একটি বহু’মাত্রিক সমস্যা। করো’নার কারণে শুধু যে জীবনহানি হচ্ছে, অনেক মানুষ অ’সুস্থ হচ্ছে তা নয়। করো’না রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে সংকটে ফেলছে, ব্যক্তি মানুষকে দেউলিয়া বানাচ্ছে, মধ্যবিত্তদের দারিদ্র্যসীমা’র নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। এ কারণে করো’নার বি’রুদ্ধে জয়টা সব দেশের জন্যেই কঠিন। বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি কঠিন। কিন্তু শেখ হাসিনা, যিনি ল’ড়াই সংগ্রাম করেই এতদূর এগিয়ে এসেছেন, তার জন্যে এই ল’ড়াই কেন কঠিন? এই প্রশ্নের উত্তর যদি আম’রা খুঁজি, তাহলে দেখবো যে, কতগুলো কারণে এই ল’ড়াইটা শেখ হাসিনার জন্যে ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

১. উদ্দীপ্ত সহযোদ্ধা নেই

শেখ হাসিনা যেন একাই ল’ড়াইটা করছেন। তার যারা সহযোদ্ধা, তারা শুধু দায়সারা গোছের কাজ করছেন। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে প্রেরণাদায়ক উদ্দীপ্ত ভাবভঙ্গী নেই, নেই আশা জাগানিয়া মনোভাব। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজটাই হচ্ছে দায়সারা, কোন একটা কাজ কোনভাবে শেষ করতে পারলেই যেন হবে। কাউকে ওরকম সাহসী, উদ্বুদ্ধকারী মনে হচ্ছে না। এটাই হলো করো’না ল’ড়ায়ের সবচেয়ে বড় সংকট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২. রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা পাশে নেই

শেখ হাসিনা এই করো’না যু’দ্ধ মোকাবেলায় আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং সহযোদ্ধা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন আমলাদেরকে। রাজনীতিবিদদেরকে তিনি বসিয়ে রেখেছেন সাইডলাইনে। কিন্তু একটি বহু’মাত্রিক ল’ড়াইয়ে রাজনীতির গুরুত্ব অ’পরিসীম এবং রাজনীতিবিদদেরকে বাদ দিয়ে এই ল’ড়াইয়ে জয়ী হওয়া কতটা সহ’জসাধ্য হবে এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।

৩. সঠিক তথ্য প্রাপ্তির অ’প্রতুলতা

একটি ল’ড়াই জিততে গেলে সে’নাপতিকে সঠিক তথ্য পেতে হয়। জানতে হয় কোথায় ক্ষত, কোথায় অনিয়ম, কোথায় ব্যর্থতা। কিন্তু এই করো’না ল’ড়াইয়ে শেখ হাসিনা সঠিক তথ্য পাচ্ছেন কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে তিনি সঠিক তথ্য পাচ্ছিলেন। পেয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যে অনিয়ম-দূর্নীতিগুলো হচ্ছিল, সেগুলো বন্ধ করার জন্য উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ মনে হচ্ছে যে তিনি সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। যে কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা

৪. স্বার্থন্বেষী মহলের কারসাজি

ক্ষমতার চারপাশে থাকে কিছু স্বার্থন্বেসী মহল এবং করো’না সঙ্কটেও এই মহল নানারকম কারসাজি করছে। গার্মেন্টস মালিকরা গার্মেন্টস চালু করে দিয়েছে, দোকান মালিকরা দোকান চালু করে দিয়েছে, তৃণমূলের হাইব্রিড আওয়ামী লীগাররা দূর্নীতি বন্ধ করেনি। আর এই সমস্ত দিক মিলিয়ে একটি স্বার্থন্বেসী মহলের অ’পতৎপরতার কারণে এই ল’ড়াইটি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে।

৫. সমালোচনাকে গ্রহণ করা হচ্ছে না

শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি সমালোচনা গ্রহণ করেন। তার সংবাদ সম্মেলনগুলোই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যেকোন নেতিবাচক প্রশ্নকেই তিনি আলি’ঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু এবারের করো’না সঙ্কটের সময় দেখা যাচ্ছে যে, সমালোচনার ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করা হচ্ছে। যেকোন সমালোচনাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে। সমালোচনা না থাকলে সঠিক তথ্য প্রাপ্তির পথও বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণেই মনে করা হয়, সঠিক সমালোচনা প্রয়োজন। আর এই সঠিক সমালোচনাও এখন করা যাচ্ছে না নানারকম প্রতিবন্ধকতার কারণে। এ কারণে ল’ড়াইটা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

তবে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ল’ড়াই করেন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিকে জয় করাই হলো তার রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। কাজেই এই ল’ড়াইয়েও শেষ পর্যন্ত তাকে জয়ী হতেই হবে। কারণ তার জয়ী হওয়ার উপরে নির্ভর করছে আমাদের অস্তিত্ব, বেঁচে থাকা।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত