
রাসেল চৌধুরী
পুরো পৃথিবীটা যখন করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিজের উজাড় করে নিয়ন্ত্রের চেষ্ঠা চালাচ্ছে ঠিক সে মুহুর্তে চট্টগ্রামে হাপাতলগুলো দাম্ভিকতার সাথে ফিরিয়ে দিচ্ছে রোগী। কোনখানে ভর্তি নিচ্ছেন না একটু সর্দি জ্বর থাকলেও। এমনকি রোগীর চিকিৎসা করতেও ওনারা অপারগতা প্রকাশ করছে। আমার প্রশ্ন যে হাসপাতালগুলো এতদিন রক্ত চোষার মত চট্টগ্রামে চিকিৎসার নামে ব্যবসা করেছে নিজেদের আখের ঘুছিয়েছেন। পকেট ভারী করেছেন কেন তারা আজ দেশের ক্লান্তি লগ্নে উদারতার পরিচয় দিচ্ছেন না। এখান থেকে এই কথা কি প্রতিয়মান হয় না চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো জনগণের কল্যাণে কাজ করে না শুধু পকেট ভারী করার জন্য চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে। কথাগুলো বললাম গতকালের তিন তিনটি ঘঠনা থেকে প্রথমে চট্টগ্রামবাসী দেখল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির উনার অসুস্থ মা রাজিয়া কবিরকে নিয়ে শুক্রবার রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। করোনা পজেটিভ আসার পর চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল তার মাকে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে পারলেন না। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি স্বাস্থ্য বিভাগের মায়ের চিকিৎসার জন্য মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, সিএসসিআর ও ইম্পেরিয়াল’র সঙ্গে যোগাযোগ করলেও প্রত্যেকে অপারগতা প্রকাশ করে । সবার যুক্তি তাদের ডায়ালাইসিস মেশিনে করোনা রোগী ঢুকলে বাকিরাও আক্রান্ত হবে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বিকল। ফলে কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যর্থ হয়ে মুমূর্ষু মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। তিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। যার আইসোলেশনে থাকার কথা। তিনি এখন মায়ের চিকিৎসার জন্য হাসাপতালের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে, স্বাস্থ্য পরিচালকের এমন ্অবস্থা হলে সাধারণ জনগণের কি হবে ? অপরদিকে বেসকারী হাসপাতাল হয়েও যদি ঢাকার আনোয়ার খান হাসপাতাল ওনার চিকিৎসা করাতে পারে তাকে কেন চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর এত অপারগতা? উল্লেখ্য শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের মাকে আনোয়ার খান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বড় এবং ছোট দুই ভাইয়ের ঘঠনাতো সবার জানা ছোট ভাইকে তীব্র শ্বাসকষ্টে আইসিইউ বেডে নেওয়ার ঘন্টা কয়েকের ব্যবধানে বড় ভাইর শ্বাসকষ্ট চরমে হাসপাতালের দশটি আইসিইউ-ভেন্টিলেশনের সবগুলোতেই রোগী। সবারই শ্বাসকষ্ট। এক পর্যায়ে ছোট ভাইর ভেন্টিলেশন খুলে দেয়া হলো বড় ভাইকে। কিন্তু ভয়াল যে ধকল গেছে তা আর কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। সময়মতো আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এমন ঘটনাটি ঘঠত না। কিন্তু চট্টগ্রামে আইসিইউ ভেন্টিলেশন সুবিধা পর্যাপ্ত নেই। এস আলম গ্রুপের পরিচালকের বেলায় যা ঘটলো ঠিক একই ঘটনা কাল অন্য কোন শিল্পপতির বেলায় ঘটতে পারে। ঘটতে পারে আমার বা আমাদের বেলায়ও।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা ইসলাম সুইটি আজ রাত ২ টা ৪৫ মিনিটে শ্বাসকষ্ট নিয়েই তিনি মারা যান। উনার আইসিইউর প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোথাও আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। অবশেষে তিনি আইসিইউর অভবে মারা যান। যা চরম হতাশার।
আবার গতকাল বেশ কয়েকটা অনলাইনে নিউজ করেছে দেশের শীর্ষ ও প্রবীণ আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমীকে অসুস্থ হয়ে পরলে উনাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতে ভর্তি করার চেষ্ঠা করা হলে প্রত্যেকে অপারগতা জানান তবে উনাকে পরবর্তীতে একটি বেসকারী হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রতিদিন চট্টগ্রামের অনেকে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
অপরদিকে চট্টগ্রামের টেষ্ট সমস্যা এবং চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতা, সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা তথা বিশৃঙ্খলা অনেক। চট্টগ্রামে করোনা টেষ্ট এর অবস্থা একেবারেই বেহাল বলা চলে। দিনে ৩ হাজার মানুষ উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর দেখা যায় সীমাবদ্ধতার কারনে ১ হাজারের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে যার ফলে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। লোকবলের অভাবে নমুনাজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া নমুনা নেয়ার পর ৫/৬ দিনেও রিপোর্ট পাওয়া যায় না। এটাও চট্টগ্রামবাসীর হতাশার বড় দিক।
করোনায় আক্রান্তদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ও ফিল্ড হাসপাতালে (বেসরকারি)চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে যা আক্রান্তের হারের তুলনায় একেবারে নগন্য। ভবতে অভাব লাগে একটা মেগা সিটি চট্টগ্রাম এরি সাথে দেশের চালিকা শক্তি ও দেশের ৭০/৮০ ভাগ অর্থের যোগানদাতা চট্টগ্রাম সেই চট্টগ্রাম শহরে চার হাসপাতাল মিলে মোট শয্যা সংখ্যা৩৫০টি এবং আইসিইউর বেড সংখ্যা-১০ টি। আরো পরিতাপের বিষয় কোন হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন।
গত ২১ মে অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধার কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘হলিক্রিসেন্ট ক্লিনিক জেনারেল হাসপাতালের অধীনে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য উদ্বোধন করা হলেও এখনও রোগী ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। এরসাথে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও ইউএসটিসিকে করোনা চিকিৎসার জন্য অধিগ্রহণের ঘোষনা দেয়া হলেও লোকবল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় চিকিৎসা সেবা শুরু করা যায়নি ।
আবার সম্প্রতি একটা সংবাদ আমাকে একেবারে হতাশ করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হেমাটোলজি বা রক্ত ক্যান্সার, ক্যান্সার, ডায়াবেটিক, ও অন্যান্য কয়েকটি বিভাগ বন্ধ করে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিটকে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে যা একেবারে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমার প্রশ্ন করোনা রোগীদের বাঁচাতে গিয়ে অন্য রোগের রোগীদের মেরে ফেলবো?
পরিশেষে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার পূর্বে চট্টগ্রামে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সমন্বয় এনে চিকিৎসকসহ পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগের পাশাপশি অধিকহারে টেস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রæত রির্পোটের ব্যবস্থা করলে চট্টগ্রামের সঠিক আক্রান্তের হার নিরূপন করা সম্ভব। এরি সাথে অধিকহারে সুরক্ষা সামগ্রীর যোগান দিয়ে আইসিইউ বৃদ্ধি করতে হবে। আমার বিশ্বাস দ্রæত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার চট্টগ্রামের কেরোনা রোগের চিকিৎসার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিবেন। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করবেন।
লেখক : নিউজ ইনচার্জ, এমবি টিভি।