নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ১০টি ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ চিহ্নিত করে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথমে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড দিয়ে লকডাউন শুরু করবে চসিক। ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে এই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। লকডাউন চলাকালে উত্তর কাট্টলী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা থাকবে। কেউ ওই ওয়ার্ড থেকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারবেন না, কেউ প্রবেশও করতে পারবেন না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে গঠিত সরকারের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবার (১৩ জুন) ঢাকার দুই সিটি, চট্টগ্রাম সিটি, গাজীপুর সিটির বিভিন্ন এলাকাকে রেডজোন চিহ্নিত করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা চিঠি পেয়ে রোববার সমন্বয় সভা করেছি। সভার সিদ্ধান্ত হলো ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড লকডাউন করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য ৯টি ওয়ার্ড লকডাউন করা হবে।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ দিন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। যার যা দরকার তা চসিক ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, পুরো ওয়ার্ডের নাগরিকদের কিছু হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। যার যা লাগবে তা সামর্থ্যবানরা বিনিময় মূল্যে পেয়ে যাবেন। যারা অসহায় তাদেরকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাপোর্ট দেওয়া হবে। প্রশাসন সক্রিয় থাকবে যাতে কেউ ঘর থেকে বের হয়ে আড্ডাবাজি করতে না পারে। লকডাউন মানে লকডাউনই। ১৬ জুন থেকে পরবর্তী ২১ দিন কোন ছাড় নেই।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত সরকারের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে লাল এলাকা চিহ্নিত করবেন। রেড জোন চিহ্নিত এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের বাড়তি তদারকি ও নজরদারি থাকবে। অনেক বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হতে পারবেন না, বাইরের কেউ ঢুকতে পারবেন না। রেডজোনের করোনা আক্রান্তরা আইসোলেশনে থাকবেন। তাদের সংস্পর্শে আসা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের জরুরী ওষুধ ও খাদ্যপণ্য প্রশাসন পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীরর অন্যান্য ওয়ার্ডগুলো হলো— ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড, ২১ নম্বর জামালখান ও ২২ নম্বর এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনা বিস্তারের প্রথম থেকেই কাট্টলী এলাকায় প্রচুর রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। কাট্টলীতে শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। প্রথম দিকে একটি গার্মেন্টস কারখানার এক কর্মকর্তার শরীরের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তারপর স্থানীয় অনেকের পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়েছিল। তখন শুধুমাত্র আক্রান্তদের বাসস্থান লকডাউন করা হয়েছিল। এবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো ওয়ার্ডই লকডাউন করলো।