তৈরী পোশাক শিল্প, যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে গড়ে দিয়েছে অনন্য একটি স্থান। দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ছোট্ট একটি দেশের দক্ষ কর্মীদের হাতে তৈরিকৃত পোশাক আজ ঘুরছে বিশ্বের উন্নত সব দেশে। উন্নত দেশের ধনী, সম্পদশালী মানুষজন পরছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ ‘ ট্যাগ সম্বলিত পোশাক। এই তৈরী পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ পৌঁছেছে বিশ্বের দ্বিতীয় রপ্তানীকারক দেশের তালিকায়।
দিন দিন বেড়ে চলছে দেশের তৈরী পোশাক রপ্তানির পরিমাণ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় দিন দিন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আগামীতে এই বাজার আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করছেন দেশীয় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রপ্তানিতে একধাপে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হওয়া ৩৯৩ কোটি ৮১ লাখ ডলারের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার পরিসংখ্যানেও এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ দখলে ছিল বাংলাদেশের। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে সেটি বেড়ে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ। এজন্য দিন দিন চীনে পোশাক উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাসাধারণ ঝুঁকছে বাংলাদেশের দিকে এবং কারখানাগুলোতে বিরোধী পাচ্ছে ক্রয়াদেশ। সে জন্য সামনের মাসগুলোতে রপ্তানি বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ছয় হাজার ২৪৮ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। অটেক্সা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এবার ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি পোশাক আমদানি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা পোশাক আমদানি বৃদ্ধি করলেও শীর্ষ রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও বাজার হিস্যা কমছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ২ হাজার ৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। গত বছরের একই সময়ের হিসাবে তাদের রপ্তানি কমেছে দশমিক ০৫ শতাংশ। আবার গত বছর শেষে চীনের বাজার হিস্যা ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে সেটি কমে ৩২ দশমিক ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে কিছু দিন আগে ছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। এই দুর্যোগের কারণ ছিল রানা প্লাজায় ধস ও তাজরীন ফ্যাশনে আগুন। এই দুটি ঘটনার পর বিদেশী ক্রেতাগণ অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে। এছাড়াও আগে ছিল দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে থেমে থাকতো পণ্য উৎপাদন এবং দেরি হতো ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে। বর্তমানে দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় এবং চলমান রপ্তানি প্রক্রিয়া আগের থেকে আরো সমৃদ্ধ হওয়ায় দেশের প্রতি বহির্বিশ্বে ইতিবাচক ধারণা হওয়ায় বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হচ্ছে এই দেশ থেকে পণ্য ও সেবা সুবিধা ভোগ করার জন্য।
দেশের পোশাক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলায় পণ্যের গুণগত মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং এর জন্যই দেশের তৈরী পোশাক শিল্প খুব সহজেই উন্নত বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে।