ঈদের আনন্দ নেই চবি উপাচার্যের পরিবারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

হৃদয় আলম, চবি প্রতিনিধি

সদ্য স্বামী বিয়োগে বিবর্ণ এক ঈদ পার করল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার। রোজার ঈদেও যে পরিবারটিতে ছিল ঘরভর্তি আনন্দ আর উৎফুল্লতা, মাত্র দুই মাস ঘুরতেই পরিবারের প্রধানকে ছাড়া সেই পরিবারের ঈদুল আযহাতে ছিল না কোন রঙ। স্বামীর শূণ্যতায় ঈদের দিন স্ত্রী যেমন চোখের জলে ভেসেছেন তেমনি পিতার জন্য কেঁদেছেন দুই সন্তান।

গত মঙ্গলবার অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) লতিফুল আলম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকেই পরিবারটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরিবারের বটবৃক্ষের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েন উপাচার্যসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাই অন্যবারের মত এবারের ঈদ ছিল তাদের কাছে অন্য রকম।

প্রতিবছর দুই ঈদে স্বামী ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে জায়নামাজ, নতুন কাপড় আর তসবি নিয়ে স্ত্রী থাকতেন অপেক্ষায়। গোসল করে সেগুলো নিয়ে নামাজ আদায়ে যেতেন স্বামী লতিফুল। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে পরিবারের সকল সদস্যরা বসে এক সাথে খাবার খেতেন। স্ত্রীর হাতের পছন্দের সুস্বাদু খাবারের স্বাদে হাঁসি,আড্ডা আর গল্প চলতো সমানতালে। সেই আড্ডায় রসদ যোগাতেন আত্মীয়স্বজনরাও। লতিফুল আলম স্ত্রী, সন্তান, নাতি নাতনীদের নিয়ে সারা দিন মেতে থাকতেন। এবার ঈদে সবাই আছে নেই শুধু সেই মানুষটি।
গত ১১ জুলাই উপাচার্য শিরীণ আখতার, তার স্বামী মো. লতিফুল আলম চৌধুরী, মেয়ে এবং তিন নাতনিসহ পরিবারের সাত সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়। পরে ১৩ জুলাই রাতে উপাচার্য, তার স্বামী ও মেয়ে রিফাত মোস্তফা সিএমএইচে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ১ সপ্তাহ পর লতিফুল করোনামুক্ত হলেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

অসুস্থতার পরও পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছে ছিল লতিফুল আলমের। রোববার (২ আগস্ট) দুপুরে উপাচার্য
অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়ে রিফাত মোস্তফা টিনার সাথে কথা হয়।

তিনি জানান, গতকাল শনিবার ফজরের নামাজের পর ছয়টা পর্যন্ত আব্বুর জন্য কান্না করেছে আম্মু। আব্বুর খুব ইচ্ছে ছিল কুরবানি করবে ছেলে মেয়ের সাথে। প্রতি ঈদে আব্বু নামাজের যাওয়ার আগেই আমাদের গোসল করে নিতে বলতেন। নামাজ শেষ করে আব্বু এলে সালাম করে খেতে বসতাম। কেউ গোসল না করলে আব্বু খুব রাগ করতেন। বলতেন, কেনো ঈদের দিন আগে গোসল করে পরিপাটি থাকলে কি হয়। এবারও ভাইয়া আর কাকারা বাসায় আসতেন। এবার আব্বু নেই, বাসায় তেমন কিছু রান্না হয়নি। বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু রান্না হয়েছে। কথা বলতে গিয়ে যেনো গলা ধরে আসছিল রিফাত মোস্তফার।

তিনি আরও বলেন, আব্বুকে দেখতে ভাইয়া মালোশিয়া থেকে আসার পরে, আব্বু ভাইকে বাসায় ঈদ করবে বলেছিলেন। আমি বছরের একটা ঈদ আব্বু-আম্মুর সাথে করি। আমার সন্তানদের আব্বু খুব আদর করতেন। তারা আব্বুর আদর যত্নে বড় হয়েছে। আমার সন্তানরাও আব্বুকে খুঁজে। আমাদের পুরোটা হৃদয় জুড়েই ছিল আব্বু।

বাবার চলে যাওয়ায় তার মা অধ্যাপক শিরীণ আখতার অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আম্মাকে সব বিষয়ে সাহস যোগাতেন আব্বা। করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে ভাল রাখতে আম্মাকে কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। আম্মাও করোনার প্রথম থেকে সব রকম সহায়তা নিয়ে কর্মচারী কর্মকরাতাদের সহায়তায় কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার একটি ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে কাজ করেছেন।

করোনা সংকটে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দিন-রাত কাজ করে গেছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। আর্থিক সংকটে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিম্ন ও হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের সহায়তা করেন। প্রধানমন্তীর তহবিলে জমা দিয়েছেন ১কোটি টাকা। স্বামী ঘর থেকে বের না হলেও শিরীণ আখতার বের হতেন কাজের প্রয়োজনে। এভাবেই শিরীণ আখতারের সংস্পর্শে তার স্বামী আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

সোস্যাল নেটওয়ার্ক

সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত