
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি):
চর্যাপদের হাত ধরে সুদীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে আজকের বাংলা নাটক সমৃদ্ধির পথে বেগবান। যার মূল অবদান নাট্যকর্মী ও নাট্য নির্মাতাদের। সংস্কৃতিতে একে বলা হয়েছে কাব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
“কাব্যেষু নাটকং রম্যম্।”
নানান ইতিহাস ঐতিহ্যের হাত ধরে এগিয়ে চলা বাংলা নাটক কখনো লড়াই সংগ্রামের হাতিয়ার হয়েছে কখনো বা চিত্ত বিনোদনের পাথেয়। এই হাতিয়ার আজ জনগণ, সমাজ, রাষ্ট্র পরিবর্তণের জন্য অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ।
থিয়েটার নির্দেশক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ( অলি) তেমনি এক নাম। কাপ্তাই এর গর্বিত সন্তান তিনি। তাঁর মন ও মননের সৌন্দর্য্য, থিয়েটারের সাংগঠনিক কর্মের দক্ষতা, নাট্য নির্দেশনায় নতুনমাত্রা উন্মোচন নাট্য জগতকে দিয়েছে এক নুতন পথের দিশা । আলোকিত এই জনের কর্মকান্ড বলে দেয় তার আগামীর পথ চলা এবং দেশের এই শক্তিশালী মাধ্যমকে আরও উন্নত থেকে উন্নততর করার বলিষ্ঠ প্রয়াসে তিনি কতটা বদ্ধ পরিকর।
নাট্য নির্দেশক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ডাকনাম- অলির জন্ম বেড়ে উঠা রাঙ্গামাটি জেলার রুপসী কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়িতে। পিতা- মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং মাতা- ফাতেমা বেগম শিশুর বড় ছেলে তিনি। ছোট বেলা থেকে বেড়ে উঠেছেন কাপ্তাইয়ের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। ছোট বেলায় তাঁর গানের হাতেখড়ি হয় কাপ্তাইয়ের সংস্কৃতি অঙ্গনের অতি পরিচিত সঙ্গীত শিক্ষক ফনিন্দ্রলাল ত্রিপুরার নিকট। পরবর্তীতে ” নাটকের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন” এবং মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে জনগণের সামনে তুলে ধরার মননে ভর্তি হয় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। সেখান হতে তিনি প্রথম বিভাগে ২য় স্হান অর্জনের মাধ্যমে নির্দেশনায় এম. এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি আইসিসিআর স্কলারশিপ পেয়ে কলকাতা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিভাগ থেকে নির্দেশনায় এম.এ ডিগ্রি অর্জন করে। সেখানেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্হান অধিকার করেন। এছাড়া তিনি সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বড়ইছড়ি কর্নফুলি নুরলহুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ইতিমধ্যে চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী শিশু বিদ্যালয় এবং কেআরসি স্কুলেও তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এর কিছু সময় অতিবাহিত করেছেন।
নাট্যকর্মী, নাট্য নির্দেশক অলি ইতিমধ্যে অর্জন করেছেন অনেক সম্মাননা, যা তাঁকে কাজ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
তৎমধ্যে আইসিসিআর (ICCR) স্কলারশিপ ২০১৭-১৮ সেশন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৬ আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা সার্টিফিকেট গ্রহন, ইন্টারনেশনাল থিয়েটার এন্ড ডান্স ফেস্টিভ্যাল, ২০১৪ আয়োজনে স্পন্দন, উড়িষ্যা, ভারত সরকারের সহযোগিতায়- মিনিস্ট্রি অফ কালচারাল এফ্যায়ার্স,ভারত থেকে “সার্টিফিকেট অফ মেরিট” সম্মাননা গ্রহন করেছেন।
তিনি শুধু অভিনয় এবং নির্দেশনা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি। নাটক নিয়ে করেছেন অনেক গবেষণা। এখানে উল্ল্যেখ যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নিয়ে “Question of Future” শিরোনামে গবেষণা সহকারীর কাজে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এছাড়া “চট্টগ্রামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংকট ও সম্ভাবনা” এবং ” উন্নয়ন নাটকের মাধ্যমে সমাজ বাস্তবতা পরিবর্তন” শিরোনামে তাঁর গবেষণা কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য নির্দেশিত নাটক গুলো ইতিমধ্যে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। তৎমধ্যে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এর “জুলিয়াস সিজার”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর “রাজা”, জিয়া হায়দার এর “পঙ্কজ বিভাস”, সাইদ আহমদ এর “মাইলপোস্ট”, “বিষহরি পালা”- কুচবিহারের প্রান্তিক নাট্যধারা “এন আর্কাইক ডাইলগ” রচনায় শিশির কুমার দাশ, বাদল সরকার এর “সার্কাস”, নটবর নন্দীর “লেলিন সরনি” এবং তাপস চক্রবর্তীর রচনায় “এবং পাগল” উল্ল্যেখযোগ্য।
তাঁর নির্দেশিত শর্টফিল্ম- “তাৎপর্য্যবিহীন” ( সন্মাননা পুরস্কার প্রাপ্ত), “চিৎকার” এবং “অবগাহন” দর্শক নন্দিত হয়েছে।
নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনয়েও তিনি সপ্রতিভ। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র “ভুমিকম্পের পরে”(ডিরেক্টর -শৈবাল চৌধুরী) এবং “হুদাই”, “বিমক্ষন”(ডিরেক্টর -পঙ্কজ চৌধুরী রনি) এ তাঁকে দর্শকরা পেয়েছেন অন্য মাত্রায়।
চট্রগ্রামের প্রাচীন নাট্য দল ” গণায়নের” এই নাট্যকর্মী দলের হয়ে অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।
তৎমধ্যে “কমরেডস হাত নামান” (নির্দেশনায়- অসীম দাশ), মুক্তধারা (নির্দেশনা -ড.কুন্তল বড়ুয়া), তিনি আসছেন( নির্দেশনা -ম.সাইফুল আলম চৌধুরী,
তাসের দেশ( নির্দেশনায় – অসীম দাশ) এবং পরীবানু( নির্দেশনায় – ড.কুন্তল বড়ুয়া) উল্ল্যেখযোগ্য।
থিয়েটার প্রাণ এই ব্যক্তিত্ত্ব নিজেকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে শানিত করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনকের সুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশে দেশের নানা সংগ্রাম ও সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছেন অগ্রসর ভূমিকায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এবং ভারত শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। নাট্যকর্মী অলি আজীবন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান নাটকের সাথে এবং সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হ্রদয়ে ধারন করে বেঁচে থাকতে চান আমৃত্যু সকলের মনের মনিকোঠায় ।।