
ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি ) ঃ
সেই দিন ৩ অক্টোবর শনিবার আকাশে ছিলো মেঘের ঘনঘঁটা, ছিলো না বৃষ্টি, ছিলো শুধু আনন্দ উল্লাস। কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সু- সজ্জিত মিলনায়তনে উপস্থিত শ’ খানেক সংস্কৃতিনুরাগী দর্শক। অবশেষে বিকেল ৪.৩০ মিনিটে কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে আমন্ত্রন জানান, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রওশন শরীফ তানি এবং খোদেজা আক্তার ভাষাকে।
উপস্থাপকদ্বয় আমন্ত্রিত সকলকে কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ হতে শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পকলা একাডেমির সদস্য গীটার বাদক নাছির উদ্দিন মিনহাজ গীটারে দেশের গান বাজিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এরপর একাডেমির শিল্পিরা সমবেত কন্ঠে পরিবেশন করেন ” রাঙ্গামাটি রঙ্গে রঙ জুড়ালো ” ” উত্তম পেগে মেঘে মেঘে ” সহ বেশ কিছু দেশের গান। অনুষ্ঠানে একাডেমির শিল্পি মোঃ রফিক এর পরিবেশনায় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী নেওয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর বিখ্যাত গান ” জীবনানন্দ হয়ে সংসারে আজো আমি ” এবং বেতার শিল্পি বিপুল বড়ুয়ার কন্ঠে ” এই মুখরিত জীবনের চলার পথে” গানগুলো আগত দর্শক উপভোগ করে তুমুল করতালিতে। অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক সংগীতা দত্তের পরিবেশনা এবং পরিচালনায় একক এবং সমবেত নৃত্য অনুষ্ঠানকে প্রানবন্ত করে।
একক সংগীতে বাউল শিল্পী রফিক আশেকীর কন্ঠে মায়ের গান এবং বাউল শিল্পী বসুদেব মল্লিকের কন্ঠে আধ্যাত্মিক গান প্রশংসার দাবিদার। কাপ্তাই শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত শিল্পী বেতার শিল্পি রওশন শরীফ তানির কন্ঠে সাঁওতালি গান এবং জ্যাকলিন তনচংগ্যার কন্ঠে তনচংগ্যা গান আগত অতিথিদের অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন। এছাড়া শিল্পকলার সদস্য কাজী সাইফ হোসেন নিলয় এর পরিবেশনায় সুমধুর বাঁশির সুর, থয়সাপ্রু চৌধুরী রুবেলের কন্ঠে গজল গান এবং বাপ্পা মল্লিকের কন্ঠে আধুনিক গান পরিবেশনা উপভোগ্য হয়েছে।
সেইদিনের সেই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক মংসুইপ্রু মারমার কন্ঠে ” চিরদিনের তুমি যে আমার” এবং নাটক বিভাগের সদস্যদের পরিবেশনায় শিক্ষা মূলক নাটিকা পরিবেশন দর্শকদের অনাবিল আনন্দ দেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আর্কষন হিসাবে ছিলো কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মুনতাসির জাহান এর কন্ঠে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরীর কন্ঠে ব্যান্ডের গান এবং নাট্যজন জন অশোক বাড়ৈর পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা। সবশেষে একটি সমবেত গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যন্ত্রসংগীতে সহযোগিতা করেন কিবোর্ডে- ঝুলন দত্ত, অক্টোপ্যাডে – অভিজিৎ দাশ কিষান, তবলাঃ অর্নব মল্লিক, লীড গিটারঃ মিনহাজ, বেজ গীটার ঃশোয়েব, বাংলা ঢোলেঃ টুন্টু দাস, পারকিশনেঃ অনিন্দ্য পাল ও সমন্বয় মল্লিক এবং অনুষ্ঠান সহযোগিতায় আনিছুর রহমান ও মোঃ ইকবাল। শব্দ নিয়ন্ত্রনেঃ মোঃ ইমরান।
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি মুনতাসির জাহানের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মাসুদ, রত্নগর্ভা মাতা রাজিয়া মাসুদ , বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশিদ কাদেরী, ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদ আলম কাদেরী, কর্ণফুলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ এইচ এম বেলাল চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খীয়াং, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি, কাপ্তাই তথ্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন। এইসময় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।